রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মূলধনও খেয়ে ফেলছে সোনালী,বেসিক,ফারমার্স,কৃষি, রূপালী,আইসিবি ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংক

সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭
658 ভিউ
মূলধনও খেয়ে ফেলছে সোনালী,বেসিক,ফারমার্স,কৃষি, রূপালী,আইসিবি ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংক

কক্সবাংলা ডটকম(৪ ডিসেম্বর) ::ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত ফেরত দিতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক। ভুক্তভোগী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত চেয়েও পায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৩০০ কোটি টাকা আমানত চেয়েছিল ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন নতুন কার্যক্রমে আসা ফারমার্স ব্যাংক।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে রাজি হয়নি। বরং তাকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। অনেক দেনদরবার শেষে গত সপ্তাহে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন মখা আলমগীর। কিন্তু কেন তিনি টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না? জবাব পেতে বেশি বিলম্ব হয়নি।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা গেল সে তথ্য। মূলত ব্যাংকের মূলধনও খেয়ে ফেলেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এভাবে মূলধন খাওয়ার তালিকায় আরও রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, বেসিক, কৃষি, রূপালী, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি খাতের আরও কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তির দুর্বলতা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব ব্যাংক ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পুরো হোঁচট খেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ব্যাংকিং খাতের করুণ পরিণতি শুরু হয় ২০০৯ সালে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক এবং একই পন্থায় সরকারি ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর থেকে এমন দশা সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতি এতটা প্রকট ছিল না। তবে এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংকট আরও বাড়বে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের সমস্যা পুরনো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর হস্তক্ষেপে ইতিমধ্যে ব্যাংকটির বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ফারমার্স ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দিলে করুণ পরিণতি কি হতে পারে তারই প্রমাণ ফারমার্স ব্যাংক।

সূত্র জানায়, ব্যবসার পরিবর্তে এসব ব্যাংক এখন মূলধন জোগান নিয়েই চিন্তিত। চলতি বছরের শুরুতে মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক। কারণ ঘাটতিতে থাকায় এসব ব্যাংক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর খেলাপি বাড়লে মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। সে কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। আর বাস্তবতা হল, এভাবে একদিকে জনগণের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে একশ্রেণীর মাফিয়ার হাতে, যা আদায়ও করতে পারছে না।

বিপরীতে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে টাকা নিয়ে মূলধন ঘাটতি মেটাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি ব্যাংকগুলো। এ টাকাও জনগণের ট্যাক্সের টাকা। অথচ জড়িতদের কারও কিছুই হচ্ছে না। মাঝখানে কৌশলে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে।

তাই যতদিন ব্যাংকিং সেক্টরের এসব ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার না হবে, ততদিন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও ঋণ অবলোপন বাড়তেই থাকবে। অভিযোগ আছে, সরকারি দলের প্রভাবশালীরা এসব ঋণ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। সে কারণে সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৬৮৯ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা। এর বাইরে বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা।

তবে এবারই প্রথম মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে নতুন কার্যক্রমে আসা ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ৭৫ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ব্যাংকের জন্য ৭৫ কোটি টাকাও অনেক বড় ব্যাপার। সব মিলিয়ে সরকারি এবং বেসরকারি ৭ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংকট আরও বাড়বে। এখন পর্যন্ত যত নতুন ব্যাংক দেয়া হয়েছে তার এক-তৃতীয়াংশ অপ্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, সংকট উত্তরণের কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোকে ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেট থেকে ৩৪১ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৪১ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয় সরকার।

এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মূলধন জোগান দিয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। তবে ব্যাংকগুলো চেয়েছিল সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। আবার চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এর মূল কারণ হিসেবে জানা যায়, গত কয়েক বছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে চার ব্যাংকে। এগুলো হল- সোনালী, বেসিক, রূপালী এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এছাড়া লুটপাটের তালিকায় আরও কয়েকটি ব্যাংক রয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ বর্তমানে টানা ৯ বছর দেশ পরিচালনা করছে। শুরুটা হয়েছিল ২০০৯-এ। কিন্তু অভিযোগ আছে, ওই সময় সরকার গঠনের পরপরই কিছু দলবাজ লোক ব্যক্তিস্বার্থে প্রথমে সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর রীতিমতো হামলে পড়ে।

দেখা যায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং এমডি নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় সেক্টরটিতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি-লুটপাট করা হয়।

সূত্রগুলো বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল ছিল ব্যাংকিং খাতের ‘অন্ধকার যুগ’ বা দুর্দশাগ্রস্ত সময়। এ সময়ে হলমার্ক কেলেঙ্কারি এবং বেসিক ব্যাংকে ব্যাপক হারে লুটপাট করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ঋণ অনিয়ম ও রূপালী ব্যাংকেও ঘটে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ভালো ছিল। এরপর থেকে নজিরবিহীন লুটপাটের শিকার হয় ব্যাংকটি। শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এরপরই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি বাড়তে থাকে।

এছাড়া ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে ৭ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।

658 ভিউ

Posted ২:২৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com