সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অষ্টম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে (এফওসি) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুই দেশের উদাসীনতার কারণে তা আর গঠন করা হয়নি। যে কারণে নাগরিত্ব যাছাই-বাছাই করা ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা এখনো নিজ দেশে ফিরতে পারেনি।
এদিকে গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের স্বাক্ষরিত ‘এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করতে আগ্রহী মিয়ানমার।
দেশটি বলছে, সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ হলে বাংলাদেশে থাকা অন্যদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর প্রায় ৮৫ হাজার ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
গত ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের চুক্তি স্বাক্ষরের পরও প্রতিদিনই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে। আর আগের সাড়ে চার লাখসহ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ২ হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছিল অনেক আগে। আর দুই দেশের অষ্টম এফওসিতে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা আটকে যায়। তবে নতুন চুক্তি অনুযায়ী সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রথমে হবে। তাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হওয়ার পর শিবিরে থাকা বাকিদের বিষয়ে বিবেচনা করবে মিয়ানমার।
জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারে ঢাকা-নেপিদোর মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে গত নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট করবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২ জানুয়ারির মধ্যেই শুরু হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে আসা হিন্দু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে শুরু হবে এ কার্যক্রম।
গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বাক্ষরিত টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে তাদের পুনর্বাসন ও পুনরেকত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় পরামর্শ দেবে।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতি চার মাস পর তাদের নিজ দেশের সরকারের কাছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরবে। মূল চুক্তির দিন থেকে দুই মাসের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রত্যাবাসন শুরু করবে।