যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মযাজক অ্যান্ড্রু ব্র্যানসনকে তুরস্কে আটক এবং আরো কিছু কূটনৈতিক ইস্যু ঘিরে ন্যাটোর এ দুই সদস্য দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। দুপক্ষের সম্পর্কের এ টানাপড়েনে ডলারের বিপরীতে লিরার মান রেকর্ড কমে গেছে। ঠিক এ পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিল তুরস্ক। এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্ক থেকে আমদানি করা অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে বর্ধিত শুল্ক আরোপ করছে তুরস্ক।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান স্বাক্ষরিত গেজেটে প্রকাশিত এক ডিক্রিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা যাত্রীবাহী গাড়িতে শুল্ক দ্বিগুণ করে ১২০ শতাংশ করা হয়েছে, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে এ শুল্ক বেড়ে হবে ১৪০ শতাংশ এবং তামাক পাতায় শুল্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া প্রসাধন সামগ্রী, চাল ও কয়লার ক্ষেত্রেও আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত অকতাই টুইটারে বলেন, ‘কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের অর্থনীতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছাকৃত আঘাতের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো।’
ওয়াশিংটনের সঙ্গে আঙ্কারার এ দ্বন্দ্বের জেরে লিরার মান রেকর্ড কমে গেছে; চলতি বছর ডলারের বিপরীতে লিরা ৪০ শতাংশের বেশি মূল্য হারিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সরবরাহের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অবশ্য মঙ্গলবার লিরার মান প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মূলত চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন— এ খবরের পরিপ্রেক্ষিতেই লিরা কিছুটা চাঙ্গা হয়। বুধবার ডলারের বিপরীতে লিরার মান দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৪১-এ।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক অর্থনৈতিক যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তিনি স্থানীয় মুদ্রা চাঙ্গা করে তুলতে সাধারণ মানুষকে ডলার ও ইউরো বিক্রি করে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপড়েনের পাশাপাশি চীনের বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে মারাত্মক দরপতন হয়। এর মধ্যে জাপান বাদে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহত্তর সমন্বিত সূচক এমএসসিআইয়ে ১ শতাংশের বেশি পতন হয়; যা ২০১৭ সালের আগস্টের পর সর্বোচ্চ পতন। তুর্কি লিরার স্থিতিশীলতার আভাসে মঙ্গলবার এ সূচকে দশমিক ৪ শতাংশ যোগ হয়েছিল।
এছাড়া হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচকটির এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন হয় (১ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স হারায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির গতি হ্রাসের লক্ষণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির চলমান বাণিজ্য বিবাদের প্রভাবেই শেয়ারদরে এ পতন হয়।
ফার্স্ট সাংহাই সিকিউরিটিজের হংকংভিত্তিক বিশ্লেষক লিনাস ইয়েপ বলেন, ‘নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর বছরের প্রথমার্ধের প্রতিবেদন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক ধারণার পরিপ্রেক্ষিতেই এ পরিস্থিতি হয়েছে।’
এছাড়া জাপানের নিক্কেইয়ের ১ শতাংশ পতন হয়েছে। তবে সরকারি ছুটির কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারগুলো বন্ধ ছিল।
এদিকে বুধবার বিশ্বের শীর্ষ ছয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের অবস্থা পরিমাপক সূচক ৯৬ দশমিক ৮৬-এ দাঁড়ায়; যা ২০১৭ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ। মূলত ইউরোর পতনে ডলার আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ডলারের বিপরীতে ইউরো দুর্বল হয়ে ১ দশমিক ১৩ ডলারে পৌঁছে; যা গত বছরের জুলাইয়ের পর সবচেয়ে দুর্বল রূপ।