কক্সবাংলা ডটকম(৫ আগষ্ট) :: জুনে ১৯ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে সর্বোচ্চে পেয়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনায় মে মাসে রফতানি বাড়লেও জুনে আবার তা কমে আসায় ঘাটতি বেড়েছে। খবর এএফপি।
শুক্রবার মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাড়ি রফতানি হ্রাস এবং তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জুনে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির সঙ্গে রফতানির পার্থক্য বেড়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও মেক্সিকোর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করার পর মার্কিন এসব বাণিজ্য অংশীদার এরই মধ্যে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতির এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে বেইজিং সতর্ক করে জানায়, তারা ৬ হাজার কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে প্রস্তুত। ট্রাম্প ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা ঘোষণা দেয়ার পর চীন এ প্রতিক্রিয়া জানায়।
হোয়াইট হাউজও চীনের পালটা হুমকিকে ‘দুর্বল’ বলে আখ্যা দেয়। ট্রামেপর শীর্ষ অর্থনৈতিক সহযোগী ল্যারি কুডলো বাণিজ্য দ্বন্দ্বে ট্রাম্পের অবস্থানকে ‘অবমূল্যায়ন’ না করার ব্যাপারে সতর্ক করেন।
জুনে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩২০ কোটি ডলার বেড়ে ৪ হাজার ৬৩০ কোটি ডলারে পৌঁছে। বিশ্লেষকদের ধারণাকে ছাপিয়ে গিয়ে এ ঘাটতি ২০১৬ সালের নভেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় প্রান্তিকের সংশোধিত প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। গত সপ্তাহে প্রকাশ হয়েছিল, ওই প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জিত হয়েছে, যেটিকে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলে প্রশংসা করেছিলেন।
মে মাসে চীনের পাল্টা শুল্কারোপের ভয়ে মার্কিন তেল এবং সয়াবিনের আমদানি বাড়িয়ে দেন চীনা আমদানিকারকরা। এর ফলে এপ্রিল থেকে জুন সময়ে সাময়িকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগে। জুনে সয়াবিনের রফতানি বৃদ্ধি পেতে থাকলেও মার্কিন গাড়ি, উড়োজাহাজ ও ওষুধ রফতানি হ্রাস পেয়েছে।
প্যান্থিয়ন মাইক্রোইকোনমিকসের ইয়ান শেফার্ডসন সতর্ক করে বলেন, তৃতীয় প্রান্তিকে একটি ‘বড় আকারের পতন’ আসছে, যার ফলে প্রতি মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৩০০ কোটি ডলার করে বাড়তে থাকবে। তিনি বলেন, ত্রৈমাসিকজুড়ে রফতানি বৃদ্ধি পাবে, তবে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা আমদানির পরিমাণ আরো দ্রুত বৃদ্ধি করবে।
ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ ‘জেতা সহজ’ বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী নির্বাচনী প্রচারণার একটি প্রধান বিষয় ছিল।
তবে শিল্প খাত এবং রিপাবলিকান সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, এ দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
আমদানিকৃত তেলের গড়মূল্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৭৩ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছেছে। যার ফলে জুনে তেল আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে পৌঁছে, যা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মার্কিন অপরিশোধিত তেল রফতানিও বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ২ হাজার ৪০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধি করায় এপ্রিল থেকে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে মার্কিন রফতানি পণ্যগুলোর জন্য বিদেশী ক্রেতাদের আরো বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকস জানায়, ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতের পূর্বাভাস আরো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এক পত্রে জানায়, আমাদের মডেলিং ইঙ্গিত দেয়, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে পরিষ্কারভাবেই মার্কিন অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে শুক্রবার মেক্সিকোর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোরের একজন বাণিজ্য সমঝোতাকারী জেসুস সিয়াদে শুক্রবার দুদিনব্যাপী ওয়াশিংটন সফর শেষে ইঙ্গিত দেন, নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) নিয়ে চলতি মাসে আবার আলোচনা শুরু হতে পারে।
Posted ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta