কক্সবাংলা ডটকম(১৯ জুন) :: শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ব্ল্যাকমেইল’ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে চীন। পাশাপাশি ১৯ জুন দেশটি সতর্ক করে জানিয়েছে, ট্রাম্প নতুন করে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপের যে হুমকি দিয়েছেন, বেইজিং তার উপযুক্ত জবাব দেবে। পাল্টাপাল্টি এ প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে শুল্ক নিয়ে চাপানউতোর আরো চরম আকার ধারণ করছে। আর এ কারণে এশিয়ার শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
গত সোমবার ট্রাম্প মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করার নির্দেশ দেন। চীনের ‘অগ্রহণযোগ্য’ শুল্কারোপের বিপরীতে এ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ট্রাম্প আরো বলেন, চীন যদি পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তবে তিনি আরো ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করবেন। এর ফলে সব মিলিয়ে সম্ভাব্য ৪৫ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করা হতে পারে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, চীনকে অন্যায্য চর্চা পরিবর্তন, মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার উম্মোচন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো বেশি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য উজ্জীবিত করতে অবশ্যই আরো পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ১৫ হাজার কোটি ডলারের চীনা আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করেন। এর পাল্টা জবাবে বেইজিংও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে।
শুক্রবার মার্কিন এ নেতা সতর্ক করে বলেন, বেইজিং যদি শুল্কের বিপরীতে পাল্টা শুল্কারোপ করে, তবে তাদের ওপর ‘অতিরিক্ত শুল্ক’ আরোপ করা হবে।
নিজের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরো অনেক বেশি ন্যায়সঙ্গত হওয়া জরুরি। তিনি আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট শির (জিনপিং) সঙ্গে আমার একটি দারুণ সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা অনেক বিষয়েই একত্রে কাজ চালিয়ে যাব। তবে চীন বা দুনিয়ার অন্য কোনো দেশ বাণিজ্যের মাধ্যমে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র তা আর বরদাশত করবে না।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসবের জবাবে জানায়, দুপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি আলোচনার মাধ্যমে যে সম্মতিতে পৌঁছানো গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের অতি চাপ প্রয়োগ ও ব্ল্যাকমেইলের চর্চা সেখান থেকে তাদের সরে আসতে বাধ্য করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দারুণভাবে হতাশ করেছে।
দেশটি জানায়, যদি যুক্তরাষ্ট্র অযৌক্তিক আচরণ অব্যাহত রাখে, তবে এসবের বিপরীতে পাল্টা শুল্কারোপ ছাড়া চীনের হাতে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
টোকিওর এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ এমার্জিং মার্কেটস ইকোনমিস্ট কোতো হিরায়ামা বলেন, মনে হচ্ছে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে কৌশল নিয়েছিলেন, সেটিই প্রয়োগ করতে চাইছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে উত্তেজিত হয়ে আলোচনায় সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। সমস্যা হচ্ছে, চীনের সঙ্গে এ ধরনের কৌশল কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের দ্বন্দ্ব স্বয়ং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি করতে পারবে না। তবে ট্রাম্পের আরো বেশি হুমকি দেয়ার আশঙ্কা সব সময়ই থেকে যায়, যার ফলে আরো ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্যে গতিশীলতা উদীয়মান বাজারগুলোর প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে এবং এ বাণিজ্যযুদ্ধ দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এ যুদ্ধে গতকাল এশিয়ার বেশির ভাগ শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা যায়। সাংহাই সূচক প্রায় দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে।
সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স প্রায় ৩ শতাংশ হারিয়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ের পর সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে হংকংয়ের হ্যাংসেং ইনডেক্স ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারিয়েছে।
টোকিওর বাজারে ১ দশমিক ১ শতাংশ পতন হয়েছে, সিউলের সূচক হারিয়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। তাইপে ও ম্যানিলায় এ হার ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক ৩ ও ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অবশ্য সিডনি ও সিঙ্গাপুরে সূচক দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এএফপি
Posted ২:৫১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta