কক্সবাংলা ডটকম(১২ জুলাই) :: আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ইরান থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ না করলে সংশ্লিষ্ট দেশকে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার উৎপাদন কমে আসায় ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল রফতানিও নিম্নমুখী।
এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে ভারত। গত মাসে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে মার্কিন জ্বালানি পণ্যে চীন শুল্ক আরোপ করলে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল রফতানি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স।
ইরান ও ভেনিজুয়েলা ভারতে শীর্ষ পাঁচ জ্বালানি তেল সরবরাহকারীর মধ্যে অন্যতম। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে ভেনিজুয়েলায় জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমেছে। এ কারণে চলতি বছর দেশটি থেকে এশিয়ায় পণ্যটির রফতানি ২১ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারতে ইরানি তেল আমদানিও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে।
গত জুনে ভারতের তেল মন্ত্রণালয় দেশটির পরিশোধকদের ইরানি জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে বলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে ইরান থেকে ভারতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি আগের মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমেছে। এ সংকট পোয়াবারো হয়ে দেখা দিয়েছে মার্কিন উত্তোলকদের জন্য।
রিড লানসন নামের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারত ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে আনছে। এটা মার্কিন উৎপাদকদের জন্য একটা সুযোগ। ভারতে পণ্যটির চাহিদা বেশ জোরালো।
বিশ্বে জ্বালানি তেল উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয়। সাম্প্রতিক সময়ে শেল (পাথরের খাঁজে আটকে থাকা খনিজ তেল) উৎপাদন বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র আমদানির বদলে উল্টো জ্বালানি তেল রফতানি শুরু করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে দেশটি থেকে দৈনিক ১৭ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, গত জুনে দেশটি ভারতে প্রতিদিন রেকর্ড ২ লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল রফতানি করেছে। এর আগের রেকর্ড ছিল গত সেপ্টেম্বরে দৈনিক ৯৮ হাজার ব্যারেল। চলতি মাসের মধ্যেই ২০১৮ সালে ভারতে মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ১ কোটি ৫০ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যাবে। অথচ গত বছর ভারতে মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ছিল মাত্র ৮০ লাখ ব্যারেল।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি তেল বাণিজ্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হলো মার্কিন পণ্যে চীনের আমদানি শুল্ক। বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে চীন শুল্কারোপ করলে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল রফতানি কমে যেতে পারে। এতে মার্কিন জ্বালানি তেলের দাম কমে ভারতে আমদানি বেড়ে যেতে পারে।
ভারতের শীর্ষ জ্বালানি তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের ফিন্যান্স বিভাগের প্রধান এ. কে. শর্মা বলেন, দাম কম থাকার কারণে মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আকর্ষণ বাড়ছে। চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি পণ্য আমদানি কমিয়ে দিলে এ আকর্ষণ আরো বাড়তে পারে। যদি চীন মার্কিন জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে, তবে ভারতে পণ্যটির আমদানি বেড়ে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা এক কার্গোর বদলে তিন-চার কার্গো মার্কিন জ্বালানি তেল আমদানির জন্য তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদি চুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছি।
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও তেলসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী মাসগুলোতে ভারতে প্রতিনিধি পাঠানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো ইরান থেকে তেল আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করা। আমরা যতটা সম্ভব ততগুলো দেশের আমদানি ৪ নভেম্বরের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনতে চাই।
বাজার বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু ভারতীয় পরিশোধনাগার এরই মধ্যে মার্কিন জ্বালানি তেল ব্যবহারের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এসব পরিশোধনাগারে সাধারণত উচ্চগ্রেডের জ্বালানি তেল পরিশোধন হয়। তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা মার্কিন পণ্যের সঙ্গে উচ্চগ্রেডের জ্বালানি তেল মিশিয়েও পরীক্ষা করে দেখেছে।
জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পেট্রোম্যাট্রিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অলিভার জ্যাকব জানান, তারা পরিবর্তন করতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়মিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ভারত এখন স্বচ্ছন্দ।
Posted ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta