কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(৯ মার্চ) :: প্রতি বছর রোজা আসার আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে রমজানের আগেই খেজুর, চিনি, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, বেসন, মুড়ি, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজার অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে আসছে।
জানা যায়, বিভিন্ন বাজার ও এলাকার মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলা, মুড়ি, খেজুর, বেসন, সরিষার তেল, বুটের ডালের দাম ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর শরবত তৈরির উপকরণ ইসবগুলের ভুসির দাম কেজিতে ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া রমজাননির্ভর বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও অহেতুক বাড়ানো হয়েছে। রোজার সময় ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করে ইফতারে ফলের আইটেম রাখতে।
তবে এ বছর রোজা শুরুর ১০-১২ দিন আগেই বাজারে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। রোজার আগে হরহামেশাই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। এবার দাম বৃদ্ধির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এটা উদ্বেগের। রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এবারো ব্যতিক্রম নয়।
খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রমজানের আগে পিএমওতে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য; গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং আসন্ন ঈদুল ফিতরে মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিঘœ করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ নির্দেশনা গুরুত্ব পাক। রোজা শুরু হতে ২ দিন বাকি। গত বছর দেখা গেছে, রমজান শুরু হওয়ার কয়েক দিন বাকি থাকতেই রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে স্থিতিশীল হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেখা যায়, পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় চরম সংকটে পড়ে নি¤œবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবার। আয় না বাড়ায় পরিবার নিয়ে শহরে টিকে থাকাটাই দায় হয়ে পড়ে। এমনকি পরিবারে একাধিক লোক আয় করেও খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে যায়। তখনো সরকারের তদারকির দুর্বলতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট।
এই কারণে নিত্যপণ্য আমদানি বিল পরিশোধে দেরি হচ্ছে আর এলসি খোলায় জটিলতাও দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সমস্যা সমাধানে রমজান মাসের পণ্য আমদানির এলসি খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডের ডলারের একটি অংশ যেন ছোলা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও খেজুরের মতো পণ্য আমদানিতে খরচ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি কমছে না কিছুতেই।
বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটের কারণে এবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে আগের তুলনায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কাজেই রোজা শুরুর আগেই যাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কৌশল বাস্তবায়ন করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এখন থেকেই।
রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা থাকে, সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
Posted ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta