কক্সবাংলা ডটকম(২২ আগষ্ট) :: মিয়ানমারের রাখাইনে কার্যকর প্রবেশের অনুমতির এখনও অপেক্ষা করছে জাতিসংঘ। গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে পালিয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হওয়ার কয়েকদিন আগে এই অভিযোগ করল জাতিসংঘ।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।
কয়েক মাস আগেই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ওই সমঝোতা অনুসারে, বাংলাদেশে পালিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ এলাকায় ফিরে যেতে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ। কিন্তু মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানালো, এখনও তারা সহিংসতার কেন্দ্রস্থল রাখাইনে কার্যকর প্রবেশের অনুমতিই পাচ্ছে না।
মিয়ানমারের নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়ক নুট ওস্টবি, সংঘাতপ্রবণ এলাকা সফরে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের অনুমতি দিতে মিয়ানমার বিলম্ব করছে এবং তাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
ওস্টবি জানান, নির্দিষ্ট গ্রামে কাজ করার বিষয়ে মিয়ানমারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ। ভালো কোনও সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত কোনও বিশেষজ্ঞ পাঠানো হবে না সেখানে। তিনি বলেন, যখন কার্যকর প্রবেশের সুযোগ হবে তখন তারা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। দায়িত্ব ভালোমতো পালনের সম্ভাব্য সুযোগ আমাদের প্রয়োজন।
জাতিসংঘ কর্মকর্তা এই অভিযোগ করলেও মঙ্গলবারই মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি সিঙ্গাপুরে এক ভাষণে দাবি করেছেন, রাখাইনের ২৩ টি গ্রামে ‘পাইলট এসেসমেন্ট প্রজেক্ট’র জন্য জাতিসংঘকে ‘অনুমতি’ দেওয়া হয়েছে।
রাখাইনে যারা এখনও রয়েছে তাদের জন্য জাতিসংঘ দ্রুত প্রভাব ফেলে এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচি এবং ছোট আকারের অবকাঠামো প্রকল্প।
ওস্টবি জানান, সু চি যে ২৩ টি গ্রামের কথা বলেছেন সেগুলো কিভাবে নির্বাচন করা হয়েছে তা সম্পর্কে তিনি জানেন না। মংডু ও বুথিডাউং শহরতলীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এসব গ্রাম। জাতিসংঘ চায় পাশাপাশি গ্রামগুলোতে কাজ করতে। এতে করে প্রতিবেশী গ্রামগুলোর মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে না।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাউ হতায় জানান, জাতিসংঘ প্রথমে এসব নির্বাচিত গ্রামে কাজ করতে পারে এবং পরে তা বিস্তৃত হবে। তিনি বলেন, আমি যতদূর বুঝতে পারি ইউএনডিপি অনুমোদিত গ্রামে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এবং পরে বিস্তৃত করবে। যদি ইউএনডিপি মনে করে এটা যথেষ্ট নয়, তাহলে আমাদের সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা করা উচিত।
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই সেখানে জাতিসংঘকে প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছে না মিয়ানমার। এমনকি মিয়ানমার অভিযোগ তুলেছে, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা রোহিঙ্গা জঙ্গিদের খাবার সরবরাহ করছে।
রোহিঙ্গারা নিজেদের রাখাইনের অধিবাসী মনে করে। কিন্তু বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সরকার তাদের জাতিগত স্বীকৃতি দেয়নি এবং অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে বিবেচনা করে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এবছর জুন মাসে জাতিসংঘ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিক সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু সমঝোতার খসড়া রয়টার্স পেয়েছে এবং গতমাসে তা অনলাইনে ফাঁস হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এই সমঝোতায় রাখাইনে ফেরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মুক্তভাবে চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা নেই।
ওস্টবি জানান, জাতিসংঘ সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু প্রকাশ করার পক্ষে ছিল। তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছিলাম প্রকাশ করাটা ভালো হবে। যদিও আমরা স্বীকার করেছিলাম অন্যান্য দেশে এমন চুক্তি সাধারণত প্রকাশ করা হয় না।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখনও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন। মঙ্গলবারও সিঙ্গাপুর সফররত সু চি তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় অস্বীকার করেন। রোহিঙ্গা শব্দের বদলে তাদেরকে ‘বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া’ মানুষ আখ্যা দেন।
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta