কক্সবাংলা ডটকম(১ জুন) :: মিয়নামারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর কাঠামোবদ্ধ নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায় পালিয়ে আসার সময় অন্তত ৭০ হাজার একর জমি ফেলে এসেছে রোহিঙ্গারা। আর সেই কৃষি জমিতে গত বছর সরকারি উদ্যোগে চাষ করা হলেও এবার সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে দেশটি। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা রাজ্য সরকার চায় এসব কৃষি জমি স্থানীয় কৃষক ও বেসরকারি কোম্পানিকে লিজ দিতে।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এখবর জানিয়েছে।
ইরাবতি জানায়, মিয়ানমারের অনেক স্থানে বছরে দুইবার ধান জন্মায়। বৃষ্টির মওসুম চলে আসাতে কৃষকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন নতুন করে চাষের। অন্যদিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ৭০ হাজার একর জমি।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার। এ অভিযানে সেনাবাহিনীর সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হয়েছে প্রত্যাবাসন চুক্তিও।
চুক্তি হলেও রোহিঙ্গারা কবে ফিরতে পারবে তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। নিশ্চিত করে কিছু বলেনি মিয়ানমারও। তবে মিয়ানমার জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হলেও তাদের রাখা হবে ট্রানজিশন ক্যাম্পে। নিজেদের ফেলে আসা ভিটায় সহসাই ফিরতে পারবেন না রোহিঙ্গারা।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা করছে, মিয়ানমার এসব শিবিরকে ট্রানজিশন ক্যাম্প বললেও আদতে সেগুলো স্থায়ী ক্যাম্প হবে। রোহিঙ্গাদের এসব ক্যাম্পেই রাখতেই চায় মিয়ানমার। এতে করে রোহিঙ্গাদের ফেলে পরিত্যক্ত কৃষি জমির কী হবে তা অনিশ্চিত এখনও।
রাখাইন রাজ্যের আইনপ্রণেতা উ মং ওন বলেন, পরিত্যক্ত ফসলি জমিগুলো স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ইজারা দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘জমিগুলো ফেলে রাখা ঠিক হচ্ছে না। স্থানীয় জনগণ ও ভূমিহীন কৃষকদের এই জমি চাষের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিংবা কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও ইজারা দেওয়া যেতে পারে।’
রাখাইনের কৃষি, খনন ও বনায়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী উ কিয়াও লিন বলেন, ‘আমরা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। তারা যা নির্দেশ দেবে আমরা তেমনটাই করবো। ৭০ হাজার একর জমিতে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নেই আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, যেসব রোহিঙ্গারা পালিয়ে যায়নি, তারা নিজেদের জমিতেই চাষাবাদ করতে পারবে।
রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইনে মোট ১ কোটি ১০ লাখ একর ধানের জমি আছে। এর মধ্যে ৭৪ হাজার মংডুতে, ৭৭ হাজার বুথিয়াডংয়ে ও ৮৮ হাজার রথেডংয়ে।
গত বছর আগস্টে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর সরকার ৭০ হাজার একর জমিতে ধান চাষ করেছিল। এবছর রাখাইনের কৃষি ও খনন মন্ত্রণালয় এর আগে ১০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। পরে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে তারা। কারণ এত সংখ্যক জনবল নেই তাদের।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে, পরিত্যক্ত জমির মধ্যে ১০ হাজার একর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হয়ে গেছে। তবে সেটা অস্বীকার করেছেন মন্ত্রী উ কিয়াও লিন।
Posted ৭:৪৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta