রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতা

শুক্রবার, ২৪ আগস্ট ২০১৮
313 ভিউ
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতা

কক্সবাংলা ডটকম(২৩ আগস্ট) :: বিশ্বনেতাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার কারণেই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞের এক বছর পরও বর্মি সেনা সদস্যরা সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নতুন করে চালানো হত্যা-নির্যাতনের বার্ষিকীকে সামনে রেখে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের ফলে প্রাণভয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ বিভিন্ন পক্ষ থেকে বহু দাবির পরও এখনো জড়িত বর্মি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের শক্ত অবস্থান নিতে ব্যর্থতার কারণেই এই নিরাপত্তা বাহিনী এখনো রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ পুরোদমে চালিয়ে যেতে পারছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই নিষ্ক্রিয়তার জন্য প্রমাণের অভাব দায়ী নয়। দায়ী রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু যতক্ষণ বিশ্বনেতারা ঢিমেতালে ভেবে চলেছেন কী করবেন কী করবেন না, ততক্ষণে অপরাধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ গায়েব বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় গত বছরের ২৪ আগস্ট।রোহিঙ্গা-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-হিন্দু হত্যা

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় বহু মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমিয়েছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বেড়েছে মৃতের সংখ্যা।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনইউচসিআর-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে চলা সহিংসতায় হাজার খানেকের বেশি রোহিঙ্গা মারা গেছে। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, সংখ্যাটি মাত্র ৪শ’।

তবে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ)-এর দাবি, ২৫ আগস্ট সহিংসতা ছড়ানোর পরবর্তী একমাসেই প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।

প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এই আনুমানিক হিসাবের কথা জানায় সংস্থাটি।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে একে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন কর্মসূচি’ বলে বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।

মিয়ানমার-মানবতাবিরোধী অপরাধ-অ্যামনেস্টি-ইন্টারন্যাশনাল-রোহিঙ্গাগত ২৭ জুন এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি। সেখানে বিভিন্ন সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা হয় কীভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক অভিযান জাতিগত নিধনে রূপ নিয়েছিল। এতে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোকে চিহ্নিত করে পুড়িয়ে দেয়া, স্থল মাইনের ব্যবহারসহ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, জোরপূর্বক অনাহার এবং এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা অপরাধের বর্ণনা রয়েছে।

তিরানা হাসান বলেছেন, ‘এই বার্ষিকী হলো এক লজ্জাজনক মাইলফলক। মানবতার বিরুদ্ধে এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে আন্তর্জাতিক মহলের টানা ব্যর্থতা দেখিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যর্থতা এমন বার্তা দিতে পারে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শুধু আগের অপরাধের জন্য দায়মুক্তিই পাবে না, বরং ভবিষ্যতে আবারও এসব অপরাধ ঘটাতে পারবে। আমরা নিশ্চয়েই এটা হতে দিতে পারি না।’

‘এক বছর হতে চলল। সুপরিকল্পিত ওই হামলায় পালিয়ে বাঁচা লাখো রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু এখনো বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনিশ্চয়তা নিয়ে ঝুলে আছে। যতদিন তাদের ওপর নির্যাতনকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মুক্ত ঘুরবে, ততদিন রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের চিন্তা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়,’ বলেন তিরানা।

গত জুনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে মিয়ানমার। সেখানে দু’পক্ষ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ‘স্বাধীন, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে সহযোগিতামূলক কাঠামো প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ করেছিল।

এই স্মারক চুক্তিকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রথম পদক্ষেপ’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বসবাস ও মানবিকতা বিষয়ক সমন্বয়ক নুট অস্টবি।

সমঝোতা স্মারকটির একটি প্রায় চূড়ান্ত খসড়া ফাঁস করা হলেও মূল চুক্তিটি প্রকাশ করা হয়নি।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ-মিয়ানমার-মানবতাবিরোধী অপরাধ-অ্যামনেস্টি-ইন্টারন্যাশনাল

তবে অ্যামনেস্টি মনে করে, এমন কোনো চুক্তি করে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত নেয়ার আগে সেখানে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সংস্থাটির ভাষায়, বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থায় রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন আর খোলা আকাশের কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া একই কথা। এটি কোনো কার্যকর সমাধান হতে পারে না।

অ্যামনেস্টি মনে করছে, পৃথিবীর সব রাষ্ট্রকে এজন্য আগে মিয়ানমারে চলমান জাতিবিদ্বেষ আর বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা ভাঙতে একসঙ্গে চাপ দিতে হবে। তখনই শুধু রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারে তাদের নিজস্ব জাতীয়তার অধিকার ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে পারবে।

জুনের ‘উই উইল ডেসট্রয় এভরিথিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এমন ১৩ জনের নাম প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছিল।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। তবে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ও সাধারণ অধিবেশনের মিলিত বৈঠকে এ নিয়ে আরও দৃঢ় আলোচনা শেষে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারে নিরাপদ অবস্থান এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেরও জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

‘ভেটো ক্ষমতার হুমকি কখনো নিষ্ক্রিয়তার অজুহাত হতে পারে না। এমন গুরুতর সুযোগ (বৈঠক) হেলায় হারানো যাবে না,’ বলেন অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলেন তিরানা হাসান।

313 ভিউ

Posted ২:০৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com