কক্সবাংলা ডটকম(১০ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাময়িক অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-এআরএসএ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকেও তারা অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
শনিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এআরএসএ’র বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে এ ব্যাপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
সম্প্রতি সংঘাতের তীব্রতার কারণে জাতিসংঘসহ অন্তত ২০টি মানবিক সহায়তা প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করে। সে সময় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল জাতিসংঘের তরফ থেকে।
সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’রা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। এরপর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত।
পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশছে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ছেন সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে।
আহত শরণার্থী হয়ে তারা ছুটছে বাংলাদেশ সীমান্তে। এরইমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
যারা বাংলাদেশে আসতে পারেননি, তাদের মানবিক সহায়তায় গতি আনতেই অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়েছে এআরএসএ।
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ৪শ জন নিহত হওয়ার কথা জানায় ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনাসূত্র। সেনাবাহিনী নিহত ৪শ জনের মধ্যে ৩৭০ জনকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করে।
চলতি মাসের ২ তারিখে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত সংকটে ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ডাব্লিউএফপি।
আর এআরএসএ-এর শনিবারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই অস্ত্র বিতরতির কালে মিয়নামারে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সমস্ত পক্ষকে আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পুনরায় শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি।’
ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিতে বাধ্য হওয়ার পেছনে মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেছিল জাতিসংঘ।
সংস্থাটি অভিযোগ তুলেছিল, মিয়ানমার সরকারের ভূমিকার কারণেই রাখাইনে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিতে বাধ্য হয়েছে তারা। জাতিসংঘ ছাড়াও আরও ১৬টি মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রমে অসহযোগিতা আর বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে তখন জানা গিয়েছিল, কখনও ভিসা বন্ধ করে, কখনও সহায়তাকর্মীদের ফেরত পাঠিয়ে, কখনওবা আবার স্থানীয় প্রশাসনের রক্তচক্ষুর মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এতে লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল মানবিক সহায়তার আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। তাই এআরএসএ-এর এক তরফা অস্ত্রবিরতিতে ত্রাণ কার্যক্রম আবার চালু হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এআরএসএ’র এই পদক্ষেপের কারণ এখনও অস্পষ্ট। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও এক তরফা এই অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এদিকে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর দাবি, লস্কর ই তইবা ও কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের মদতে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা করেছে৷ বিভিন্ন সূত্র থেকে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনের ফোনালাপ প্রকাশ করেছে বিবিসি সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে হামলা হয়। এরপর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হলে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পরিকল্পিত দমন অভিযানের বিবরণ দেয়। গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। রাখাইন থেকে বেঁচে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এই রক্তপাত বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আঞ্চলিক শক্তি ও সরকারের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
Posted ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta