কক্সবাংলা ডটকম(৬ এপ্রিল) :: রাশিয়ান অস্ত্র কেনার উপরে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, ইন্দো-মার্কিন সম্পর্কের উপর তার প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন পেন্টাগন। প্রতিরক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
উচ্চ মূল্যের সামরিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। রাশিয়ার কাছ থেকে স্টেট-অব-দ্য-আর্ট এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কিনতে যাচ্ছে ভারত। মার্কিন কাউন্টারিং অ্যামেরিকা’স অ্যাডভার্সারিজ থ্রু স্যাঙ্কশান্স অ্যাক্টের (সিএএটিএসএ) অধীনে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
সিএএটিএসএ’র ২৩১ ধারার অধীনে যে সব দেশ রাশিয়ান প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সেক্টরের সাথে লেনদেন করবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা বাধ্যতামূলক।
ডিফেন্স ফর সাউথ অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জো ফেল্টার পিটিআইকে বলেন, “এটা নিয়ে ভারতের উদ্বেগটা আমরা বুঝতে পারছি। আমরা নিজেরাও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাশিয়াকে শায়েস্তা করতেই এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, ভারতকে নয়।”
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাঁচটি এস-৪০০ সিস্টেম কেনার জন্য রাশিয়ার সাথে ভারতের দর কষাকষি অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এই এয়ার প্রতিরক্ষা সিস্টেমের মধ্যে রাডার, মিসাইল নিক্ষেপক এবং কমান্ড সেন্টারের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি রয়েছে।
কিছু এমপির মতে, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের এস-৪০০ এয়ার প্রতিরক্ষা মিসাইল কেনার প্রচেষ্টাটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে এবং প্রতিরক্ষা সচিব জি মোহান কুমারও গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
ফেল্টার বলেন, “ভারতের উদ্বেগের জায়গাটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। গত মাসে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনার জন্য বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল। আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন কারণ ভারতের সাথে শক্তিশালী বজায় রাখা এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই। আমরা আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর করতে চাই, কমাতে চাই না।”
২০১৭ সালের আগস্টে সিএএটিএসএ-তে স্বাক্ষর করা হয় এবং এটি আইনে পরিণত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর করা হয়েছে। যে সব দেশ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগের সাথে বড় ধরনের লেনদেনে জড়িত হবে, এই আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বাধ্যতামূলক।
ফেল্টার বলেন, “এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে, এ ধরনের যে কোন বিষয় নিয়েই আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু এই আইনের বিষয়টি আমাদের আয়ত্বের বাইরে। আমি আসলে ধারণা করতে পারছি না যে আসলে কি হতে পারে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে কোন সিদ্ধান্তই প্রতিরক্ষা দফতরের বাইরে হয়।”
তিনি বলেন, “বর্তমান গতিশীলতা বজায় রেখে আমরা আমাদের সম্পর্ক বিনির্মাণের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এই অংশীদারিত্ব বিনির্মাণের জন্য প্রতিরক্ষা বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক বজায় রাখা এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে এটাকে আরও গভীর করার ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা বাণিজ্য প্রায় শূণ্য থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ফেল্টার বলেন, এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
সাবেক ওবামা প্রশাসনের অধীনে পররাষ্ট্র দফতরে কাজ করেছেন আতমান ত্রিবেদী। তিনি বলেন, এস-৪০০ চুক্তির কারণে ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সেটা আমেরিকার স্বার্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
তিনি আরও বলেন, “একটি স্বতন্ত্র প্রতিরক্ষা ক্রয়ের জন্য ভারতের মতো একটা সম্ভাবনাময় অংশীদারের সাথে সম্পর্কের ক্ষতি করাটা উচিত হবে না। দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই, দুই দেশের উচিত ভারতের প্রতিরক্ষা প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য বিকল্প ব্যাবস্থাপনা নিয়ে নিঃশব্দে কাজ চালিয়ে যাওয়া।”
ত্রিবেদী বলেন, “যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে কংগ্রেসের উচিত নিষেধাজ্ঞা থেকে ভারতকে অব্যাহতি দেয়া অথবা ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র ও সহযোগীদেরকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার জন্য আইনে সংশোধনী নিয়ে আসা।”
Posted ৩:১৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta