কক্সবাংলা ডটকম :: বিয়ে মিটল সবে। তার পরদিনই যুদ্ধে যোগ দিলেন তরুণ দম্পতি। হ্যাঁ, স্বামী স্ত্রী দুজনেই। জানেন না আর কখনও দেখা হবে কি না তাঁদের। কিন্তু জানেন, দেশকে রক্ষা করতেই হবে বিদেশি শক্তির আগ্রাসনের হাত থেকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের এই তরুণ দম্পতির কথা।
“এ মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক/ এই দাবানল পোড়াক চোখ/ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক”… বিয়ের শপথ নেওয়ার সময় এমন কথাই কি মনে মনে বলছিলেন তাঁরা? না হলে কি এমন বিচ্ছিন্নতার প্রহরে দাঁড়িয়ে এইরকম করে বেঁধে বেঁধে থাকার শপথ নেওয়া যায়?
কেবল একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নয়, গোটা দেশের মানুষকেই যে নিজেদের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন এই নবদম্পতি। এই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ে ব্যক্তিগত সুখ, শখ, আশা সবকিছুকে হেলায় তুচ্ছ করে নিজেদের স্বভূমিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বদেশের মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবেন বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে।
ছেলেটির বয়স ২৪। মেয়েটির আরও কম, মোটে ২১। আর পাঁচজনের মতোই হতে পারত তাদের গল্পটাও। দুজনে মিলে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল তারা। মে মাসে বিয়ের দিনক্ষণও ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। তার প্রস্তুতি চলছিল একটু একটু করে। কিন্তু সব স্বপ্ন মুহূর্তে তছনছ হয়ে গেল সাইরেনের আওয়াজে। সূর্যমুখী ফুলের দেশ ইউক্রেন লণ্ডভণ্ড করে ঢুকে পড়ল রাশিয়ার শক্তিশালী ট্যাংক, কামান, সাঁজোয়া গাড়ির মিছিল।
সিদ্ধান্ত বদলে নিল দুজনে। পাশাপাশিই থাকবে তারা। তবে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় নয়, গুলিগোলার আগুনে ভরা যুদ্ধক্ষেত্রে। যে রাতে ইউক্রেনের উপর আছড়ে পড়ল রাশিয়ার আক্রমণ, একটুও দেরি না করে পর দিনই ইউক্রেনের সেন্ট মাইকেল’স মনাস্ট্রিতে ছুটল তারা। বিয়েটা সেরেই আবার দৌড়। এবার সেনাবাহিনীর দপ্তরে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিল নবদম্পতি। আক্ষরিক অর্থেই এবার জীবনের লড়াইটা একসঙ্গে লড়বে তারা।
হ্যাঁ, ঠিক এমন করেই নিজেদের গল্পটাকে বদলে নিয়েছেন ইউক্রেনের নববিবাহিত যুগল ইয়ারিয়ানা এবং সিভাতোস্লাভ। যুদ্ধ এক নিমেষে বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও একে অন্যের হাত ছাড়েননি তাঁরা, ছেড়ে যাননি দেশকেও। আর সেইজন্যই তাঁদের এহেন সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই।
Posted ১১:৪৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta