কক্সবাংলা ডটকম(১২ মে) :: সব ইস্যুতেই ভারত ও রাশিয়া একমত পোষণ করে, এমন দিন এখন অতীতের বিষয়। সেই ১৯৫৫ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মির ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন দিয়ে আসছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। জম্মু ও কাশ্মির প্রশ্নে পাঁচবার ভেটো দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ওই সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
কিন্তু এখন ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া বলছে, সন্ত্রাসদমনে পাকিস্তান ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার এই মন্তব্য ভারতে তেমনভাবে গ্রহণ হওয়ার কথা নয়।
ভারতে দীর্ঘ দিন রাশিয়াই ছিল প্রধান অস্ত্র রফতানিকারক। পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল বেশ নাজুক। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। নয়া দিল্লি ক্রমাগত ওয়াশিংটনের দিকে ঝুঁকতে থাকায় পাকিস্তান ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। রাশিয়ার কাছ থেকে পাকিস্তান এখন এমআই-৩৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করছে।
তারপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নতুন নীতি ঘোষণা করলে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যকার সম্পর্কে আরেক দফা অবনতি ঘটে। এই টানাপোড়েনের মধ্যে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে, রাশিয়া তালেবানকে সমর্থন করছে। কিন্তু রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। রাশিয়া বলছে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক ব্যর্থতার দায় এড়াতে এ ধরনের অভিযোগ করছে।
চীনের সাথেও কৌশলগত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে রাশিয়া। ১৯৯১ সালে তারা তাদের সীমান্ত বিতর্ক নিরসন করে এ দিকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হাসিল করে। রাশিয়া এখন চীনের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সামরিক সম্ভার বিক্রিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। ২০১৭ সালর ডিসেম্বরে রাশিয়া ১০টি সুখোই-৩৫ জঙ্গি বিমানের দ্বিতীয় চালান চীনে পাঠায়। এর প্রায় এক বছর আগে ওই প্রজন্মের চারটি বিমান পাঠানা হয়েছিল।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি সফরকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরব চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিরোধিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এমনকি চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সাথে জোট না বাঁধার পরামর্শও ভারতকে দিয়েছিলেন।
ক্রমবর্ধমান বৈরিতা
রাশিয়া-চীন-পাকিস্তান জোট গঠনের সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই নয়া দিল্লির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের জন্য আরেকটি সমস্যা হলো মস্কো ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বৈরিতা বৃদ্ধি। এই দুই জটিলতার মধ্য সতর্ক থাকতে হচ্ছে ভারতকে।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পদক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুর মেলায়নি ভারত। দেশটি বরং রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অবরোধ প্রস্তাবের বিরোধিতা পর্যন্ত করেছিল। আবার ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়টিও সমর্থন করেনি।
মস্কো ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার এই উত্তেজনা বাড়তে থাকলে ভারতের পক্ষে জটিল ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিনই হবে। ভারত আশঙ্কা করছে, পাশ্চাত্যের সাথে বিরোধ বাড়লে চীনের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হবে রাশিয়া। আবার ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে থাকে, তবে তা ভালোভাবে নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
নয়া দিল্লি অবশ্য ওয়াশিংটনকে ইঙ্গিত দিয়েছে, মস্কোর সাথে তার প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। হঠাৎ করে এই সম্পর্ক ছিন্ন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বোঝা উচিত, রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক ক্রয় হঠাৎ বন্ধ করে দিলে ভারতের সামরিক সামর্থ্য বিপুলভাবে হ্রাস পাবে।
Posted ১১:০১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta