বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তৃতির পাশাপাশি সাইবার অপরাধও নতুন মাত্রা পাচ্ছে। অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করছে। পরবর্তী সময়ে এসব তথ্য অনলাইনে প্রকাশ কিংবা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে।
এসব ঝুঁকি বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার রোধে গত ৯ এপ্রিল সরকারি ই-মেইল নীতিমালা, ২০১৮-এর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর ৮ মে এ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। নীতিমালায় দাপ্তরিক কাজে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে গভ ডট বিডি ঠিকানাযুক্ত ই-মেইল ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ই-মেইল নীতিমালার এ বাধ্যবাধকতা এখনো অনুসরণ করছেন না মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ তালিকায় আছে ধর্ম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগ।
কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রায় সব কর্মকর্তাই সরকারি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তিগত ই-মেইল উল্লেখ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সরকারি ডোমেইনে ই-মেইলের পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে, এমন মন্ত্রণালয়ের সংখ্যাও হাতেগোনা। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেককেই মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার নামসহ ডট বিডি ডোমেইনে একটি ই-মেইল আইডি তৈরি করে সরকারি কাজে মেইল আদান-প্রদান করতে হবে। এ ই-মেইল আইডি তারা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যক্তিগত বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে না। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ই-মেইল সেবা দেবে।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী দুটি করে ই-মেইল আইডি খুলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটি হবে তার পদবি দিয়ে ও অন্যটি নাম দিয়ে। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আইডি দুটি দুই ধরনের কাজে ব্যবহার করতে হবে তাদের। যেসব কর্মকর্তা অবসরে যাবেন বা চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হবে, তারা পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত ওই নামের মেইল সরকারি যোগাযোগে ব্যবহার করতে পারবেন। এক বছর পর সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ওই আইডি ও পাসওয়ার্ড বাজেয়াপ্ত করবে।
জাতীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসহ স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য নয়। তারা ইলেকট্রনিক যোগাযোগের জন্য তাদের কর্তৃপক্ষের নিয়মে ই-মেইল ব্যবহার করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন চিঠিপত্র আদান-প্রদান করেন। সেটি আর করা যাবে না। সরকারি ডোমেইনের নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে আদান-প্রদান করতে হবে। অনেকেরই এ ডোমেইনের আওতায় অ্যাকাউন্টও রয়েছে। সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই যোগাযোগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সরকারি যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৪ সালে জারি করা সচিবালয় নির্দেশমালার ১৫ অনুচ্ছেদে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এটি অনুসরণ না করায় ২০১৫ সালে আবারো স্মারক জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।