কক্সবাংলা রিপোর্ট(১১ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ, হত্যা,লুটপাট,ঘুমন্ত মানুষের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যাতিক্রমধর্মী নির্যাতন হিসাবে স্থান করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
সোমবার সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ, হত্যা,লুটপাট ও ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালিয়ে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।যা কোন জাতী বা দেশ ক্ষুদ্র জাতির উপর এ ধরনের নির্যাতন তা সকল মানবাধিকারকে হার মানিয়েছে।একারনে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়া উচিত।
তিনি বলেন,এর আগেও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার চেষ্টা করলেও কোন আলোচনাই সফল হয়নি।আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছুটা মিয়ানমারের উপর চাপ সৃস্টি করলেও রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি।এর ফলে ইতিমধ্যে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরও অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে থেকে কক্সবাজারে বসতি করেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। মোট সাত-আট লাখ রোহিঙ্গার ভারে স্থানীয় বাসিন্দারা হিমশিম খাচ্ছে, তাদেরও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। এগুলো হলো—কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন দ্রুত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ প্রয়োগ, রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা যারা করেছে তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা এবং ঢুকে পড়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন। নইলে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়বে। তখন জননিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, ওপারে নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়াটাই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল সমাধান নয়। পরিস্থিতি শান্ত হলেই তাদের পুনরায় নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।তাই এখন মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে।আর এ নিয়ে জাতিসংঘ, ওআইসি, আশিয়ান জোট সহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তৎপর করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আশিয়ানের দুই প্রভাবশালী সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সক্রিয় হয়েছে। তাছাড়া ভারত ও চীনকে কাজে লাগাতে হবে।তারা মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধের ব্যাপারে বোঝাতে পারে। এত কিছুর পরও যদি কোনো কাজ না হয়, তাহলে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা যেতে পারে।
তিনি সাবেক যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ প্রসঙ্গ টেনে বলেন,সার্বিয়ার প্রতাপশালী জেনারেলরা বসনিয়া এবং কসোভোয় গণহত্যা চালিয়ে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল।কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়।আর তাই মিয়ানমার সরকারকেও নিরীহ রোহিঙ্গাদের হত্যার দায়ে একদিন আন্তর্জাতিক আদালতে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার ওসমানী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল নাসের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta