কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৭ ফেব্রুয়ারি) :: মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী অ্যাক্টিভিস্ট। অন্যথায় গণহত্যার দায়ে সু চি বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী তিন নারী ইয়েমেনি সাংবাদিক তাওয়াক্কোল কারমান, ইরানি মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী শিরিন এবাদি এবং আইরিশ পিস অ্যাক্টিভিস্ট মেইরিড মগুইরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন শেষে গতকাল মিয়ানমারের নেত্রীর উদ্দেশে ‘বর্বরতার বিরুদ্ধে জেগে ওঠার’ আহ্বান জানান।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন শেষে গতকাল উত্তর আয়ারল্যান্ডের পিস অ্যাক্টিভিস্ট মেইরিড মগুইরে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্মি সরকার ও সেনাবাহিনী যা চালাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে গণহত্যা। মিয়ানমার সরকারের এ গণহত্যার নীতিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। তাদের আইসিসিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) নিয়ে যাওয়া হবে। এবং যারা এ গণহত্যা ঘটাচ্ছে, তারাই এর জন্য দায়ী থাকবেন।
জাতিসংঘ এরই মধ্যে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ নিপীড়নমূলক কার্যক্রমকে জাতিগত নিধন কার্যক্রম বলে অভিহিত করেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় গণহত্যার আলামত রয়েছে বলেও খোলাখুলি অভিমত দিয়েছে জাতিসংঘ।
শান্তিতে নোবেল জয়ী তিন নারী অ্যাক্টিভিস্ট রোববার ও সোমবার এ দুদিন কক্সবাজারের জনাকীর্ণ উদ্বাস্তু শিবির ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে রাখাইনে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মমতার প্রত্যক্ষ বিবরণ শোনেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ নিপীড়ন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সু চি নিজেও আইসিসিতে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ইয়েমেনি মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক তাওয়াক্কোল কারমান।
তিনি বলেন, ‘সু চি যদি তার নীরবতা অব্যাহত রাখেন, তাহলে তিনিও তাদের (মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের) একজন বলে পরিগণিত হবেন। আমাদের বোন অং সান সু চির কাছে দ্রুত জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় তিনিও অপরাধ সংঘটনকারীদের একজন হিসেবে বিবেচিত হবেন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি নিজেও একজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। নিজ দেশে অন্তরীণ অবস্থায়ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল সংগ্রাম চালিয়ে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ও নন্দিত এক নেত্রীতে পরিণত হন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বরতা সত্ত্বেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়া এবং বিষয়টিতে প্রশ্রয়মূলক অবস্থান নেয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী তুমুল সমালোচিত হন তিনি। এমনকি ১৯৯১ সালে ইয়াঙ্গুনে অন্তরীণ অবস্থায় পাওয়া সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবিও উঠেছে অনেকখানে।
রোহিঙ্গা নির্যাতনের বর্ণনা শুনে কাঁদলেন নোবেল জয়ীরা
এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে কক্সবাজারের উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে যান তাওয়াক্কল কারমান ও মেরেইড ম্যাগুয়ার।
এসময় ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের কথা শুনেন এবং তাদের বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর নেন তারা। তাদের জীবনের করুণ কাহিনী শোনেন আর কাঁদেন তারা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরার কথাও জানান কারমান ও মেরেইড।
এর আগে সকালে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তারা।
নোম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, ‘দুপুরের দিকে আসেন নোবেলজয়ী দুই নারী। সেখানে পৌঁছে ধর্ষণের শিকার চার রোহিঙ্গা নারীর ওপর বর্বর নির্যাতনের কথা শোনেন এবং এ সময় তারা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসব কথা তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরবেন বলে রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন।’
গত দুইদিন উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালীর তাজনিমারখোলা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ক্যাম্পের সার্বিক অবস্থান এবং রোহিঙ্গাদের জীবনযাপনের খোঁজখবর নেন শান্তিতে পদকজয়ী নারীরা। এ সময় ধর্ষণ, নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের সাথে একান্ত আলাপ করেন নোবেলজয়ী ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান, উত্তর আয়ারল্যান্ডের মেরেইড ম্যাগুয়ার ও ইরানের শিরিন এবাদি।
Posted ১১:০৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta