কক্সবাংলা সম্পাদকীয় :: কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তার জন্য যৌথ রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই তহবিল সংগ্রহের পরিমাণ কমছে। গত ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল তার ৭০ শতাংশের বেশি পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া তহবিল খরচের স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই তহবিলের মাত্র ৩০ শতাংশ রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় হয়, বাকিটা ব্যয় হয় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার পক্ষে যারা রোহিঙ্গাদের দেখভাল করে তাদের পেছনে। এ ছাড়া জেআরপি তহবিলের ২৫ শতাংশ কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পেছনে ব্যয় করার কথা, সেই ব্যয়ও ঠিকমতো হয় কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৭ সালে জেআরপি তহবিলে প্রয়োজন ছিল ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার, পাওয়া গেছে ৩১৭ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে ৯৫১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৫৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে ৯২০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৯৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৮ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬২৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে ৯৪৩ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৭৪ মিলিয়ন ডলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্ব শুরু থেকেই সহায়তা দিচ্ছে। তারা সহায়তা ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখার কথা বলেছিল কিন্তু সে কথা রাখেনি। সামনে রোহিঙ্গা ইস্যু যাতে ডেড ইস্যুতে পরিণত না হয় সেজন্য বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা বজায় রাখতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোস্ট ট্রাস্টের জয়েন্ট ডিরেক্টর মো. মজিবুল হক মনির বলেন, ‘গত ৪ বছরের জেআরপি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন তহবিল খরচের কোনো স্বচ্ছতা নেই। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য গড়ে ৪২৮ ডলার অর্থ সহায়তা জেআরপি তহবিলে এসেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতিটি পরিবার খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত ত্রাণ, আশ্রয়, বিভিন্ন উপকরণ বাবদ মাত্র ১৩০ ডলার পেয়েছে। বাকি অর্থের কতটুকু অন্যান্য সেবা খাতে খরচ হয়েছে, কতটুকু পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনায় খরচ হয়েছে তার সুস্পষ্ট হিসাব নেই, যা স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করা জরুরি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘জেআরপি তহবিলের বেশিরভাগ অর্থই রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হয় না। এই তহবিলের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কোনো সুযোগ নেই। কেননা স্বচ্ছতার খোঁজ নিতে গেলে তারা তহবিল দেওয়াই বন্ধ করে দেবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। সেজন্য জেআরপি তহবিলে মানবিক সহায়তা হিসেবে বড় দেশগুলো অর্থ দিয়ে থাকে।
এই অর্থ তারা বাংলাদেশ সরকারকে দেয় না। এই অর্থ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে দেয়। তারা এই অর্থ খরচ করে এবং তারা এই অর্থ কীভাবে খরচ করে তার কোনো হিসাব আমাদের দেয় না। এ ছাড়া গত ৫ বছর ধরে আমরা সরকারিভাবেও রোহিঙ্গাদের পেছনে অর্থ খরচ করছি। সাড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন টাকা খরচ করে রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি।’
বিশ্বের দাতাগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিয়ে আসছে। দাতাগোষ্ঠী এই অর্থ সহায়তা মূলত দিয়ে থাকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে, যা তারাই খরচ করে থাকে। দাতাগোষ্ঠী যে বরাদ্দ দিয়েছে তা কারা কীভাবে খরচ করছে, তার একটা সুনির্দিষ্ট হিসাব থাকা দরকার। তা হলে বিষয়টিতে স্বচ্ছতা থাকবে। আমরা আশা করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তারা আন্তরিক ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
Posted ৩:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta