কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যূষিত সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকা।
বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে কৌশলগত পরামর্শদাতা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডভিত্তিক ওই বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে ওই ঝুঁকির কথা জানিয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের বাহবা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগ এবং তাদের অন্যত্র স্থানান্তর বা নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে এখন বাংলাদেশের সুনাম ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করে অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকা। একই সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রোহিঙ্গাদের ঘিরে জঙ্গি-সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের ওপর ব্যাপক বৈশ্বিক চাপ যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের দিকেও সারা বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে।
জাতিসংঘ মনে করে, রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি মিয়ানমারে। তবে মিয়ানমার বলছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত। ফেরার পর রোহিঙ্গাদের প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী শিবিরে থাকতে হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সাল থেকে এক লাখেরও বেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে। এসব তথ্যের পাশাপাশি কক্সবাজারে আশ্রিত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসান চরে স্থানান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনার তথ্যও তুলে ধরেছে অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকা।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার পাশাপাশি মিয়ানমারে প্রায় চার লাখ, মালয়েশিয়ায় প্রায় দেড় লাখ, ভারতে প্রায় ৪০ হাজার, থাইল্যান্ডে প্রায় পাঁচ হাজার ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে নানা ধরনের ঝুঁকিতে আছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে সাগরপথে বিপজ্জনকভাবে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া গেছে। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত আগস্ট মাসে রোহিঙ্গাদের কট্টরপন্থী হয়ে ওঠা নিয়ে সতর্ক করেছেন সবাইকে।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ গত ১৫ নভেম্বর প্রথম রোহিঙ্গা দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় সেই উদ্যোগ স্থগিত রাখতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
গত আগস্ট মাসে জাতিসংঘের স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা চালানোর আলামত পাওয়ার কথা জানায়। রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না বলেও বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।
এসব তথ্য উল্লেখ করে অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকা বলেছে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তার নিজ দেশের ভেতর কী করছে সে বিষয়ে এখন বৈশ্বিক নজরদারি বেড়েছে।
এর সম্ভাব্য পাঁচটি প্রভাব সম্পর্কে অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকা বলেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঝুলে যাওয়ায় আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের তুলনামূলক কম ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানান্তর করতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়বে। রোহিঙ্গারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য মিয়ানমার সরকারের কাছে না দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে দাবি জানানো অব্যাহত রাখবে। রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগের নিন্দা জানাবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
অক্সফোর্ড অ্যানালিটিকা আরো মনে করে, অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা জোরদার করবে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা হবে। অন্যদিকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রোহিঙ্গাদের দলে টানার চেষ্টা করবে ইসলামের নামধারী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো।
রোহিঙ্গা সংকট সামাল দেওয়ার কাজে সম্পৃক্ত ঢাকার কর্মকর্তারাও বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু সামাল দিতে না পারলে তা বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরে এ সংকটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) কর্মকাণ্ড নজরে রাখা হচ্ছে। এনজিওগুলো নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করাচ্ছে এবং প্রত্যাবাসনবিরোধী করে তুলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে কেউ যাতে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Posted ১:০৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta