কক্সবাংলা ডটকম(১৩ অক্টোবর) :: জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে স্রোতের মতো আসা রোহিঙ্গাদের কারণে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে প্রশাসনিক ব্যয়, পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরণের এই অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়তে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন: তাদের পেছনে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়, সেজন্য সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন নিয়োগ করতে হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ছে। আর এই ব্যয়টা খরচ হচ্ছে বাজেট থেকে। অথচ রোহিঙ্গা সমস্যার বদলে এই খরচটা অন্য জায়গায় ব্যয় করা যেত।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জোর তৎপরতা চালাতে হবে উল্লেখ করে নাজনীন আহমেদ বলেন: তাদের কারণে কক্সবাজারে জনসংখ্যার চাপ বাড়লে সেখানে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। ফলে ওই অঞ্চলে পর্যটনের ক্ষতি হতে পারে। কেননা অতিরিক্ত লোকের চাপের কারণে দেশি-বিদেশি পর্যকরা সেখানে যাওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।
তবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে ঘিরে বাংলাদেশ কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে পারে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন: ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে যেসব ব্যবসায়িক চুক্তি ঝুলে আছে, রোহিঙ্গা সংকট দেখিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে সেসব চুক্তির সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
তিনি জানান: মিয়ানমারে বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবার বাংলাদেশের আসবাবপত্র তৈরির জন্য মিয়ানমারের কাঁচামালের উপর নির্ভর করতে হয়। এখন চিন্তার বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে দুই দেশের মধ্যে এই বাণিজ্য সম্পর্কের কোন অবনতি ঘটে কি না। এই বিষয়ে বাংলাদেশকে খেয়াল রাখতে হবে।
ড. নাজনীনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন: রোহিঙ্গাদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই নানা খাতে ব্যয় বাড়বে। যেমন- স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তাদের আশ্রয় দেয়া, খাদ্য নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এখন এসব বিষয় নিশ্চিত করতে গিয়ে বৈদেশিক সাহায্য কতটা পাওয়া যায় সেটাই দেখার বিষয়।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে পর্যটন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন: ওই অঞ্চলটা পুরোপুরি পর্যটন এরিয়া। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবং পরিবেশ দূষিত হলে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। এর প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়বে।
সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক পর্যালোচনায় বলা হয়: রোহিঙ্গা সংকটে পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে এ খাতটি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আসছে পর্যটন মৌসুমে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলেও ওই পর্যালোচনায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
‘নিরাপত্তার সংকট তৈরি হলে পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটক কমে যাবে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর একমাত্র পথ মিয়ানমার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জেরে এই সম্ভাবনাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য দেশকে দক্ষতার সঙ্গে ম্যানেজ করতে পারলে বাংলাদেশ খুব বড় ধরনের চাপে পড়বে না বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
তার মতে, রোহিঙ্গাদেরকে ওই এলাকা থেকে বাইরে আসতে না দিলে ভাল হবে। কিন্তু তাদের জন্য আমাদের বড় আকারে সাহায্য দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তবে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতসহ অন্যান্য কাজে আমাদের কিছু লোকবল ওখানে দেয়া লাগতে পারে, সেজন্য প্রশাসনিক ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে।
Posted ১০:০১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta