কক্সবাংলা রিপোর্ট(৫ ডিসেম্বর) :: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’ সংঘটনের আলামত পাওয়ার দাবি করেছে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (পিআইএলপিজি)। তদন্ত শেষে এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে তদন্ত ও ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেপিআইএলপিজি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন,ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কমিশন শুরু থেকেই সোচ্চার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে। চীন-রাশিয়ার বিরোধিতা সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদও সহিংসতার অবসান ঘটানো এবং রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের তাগিদ দেয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রও সোচ্চার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত অভিযোগকে বহুদিন আমলেই নেয়নি মিয়ানমার।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্যাটেলাইট ইমেজ আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে হত্যা-ধর্ষণ-ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত তুলে আনলেও মিয়ানমার ওই অভিযোগকে ‘অতিকথন’ কিংবা ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে উড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে,রাখাইনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ রাখে তারা।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (পিআইএলপিজি)-কে দায়িত্ব দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। সোমবার (৩ ডিসেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে পিআইএলপিজি।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে বলে দাবি করার ক্ষেত্রে যৌক্তিক ভিত্তি আছে।
মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমাদের আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পরিষ্কার যে, রোহিঙ্গারা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার শিকার হয়েছে। আর এ মর্মে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আইনি ভিত্তি রয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ সংঘটনকারীদেরকে আইনি জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকলো।’
Posted ৫:৩৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta