রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’ : জাতিসংঘের তদন্তে যেভাবে বেরিয়ে এলো

সোমবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
322 ভিউ
‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’ : জাতিসংঘের তদন্তে যেভাবে বেরিয়ে এলো

কক্সবাংলা ডটকম(৩ সেপ্টেম্বর) :: নির্বিচার হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া, শিশু নির্যাতন ও হত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণ – জাতিসংঘ নিজস্ব অনুসন্ধানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর এসব নির্যাতনের তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে।

ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারে ‘আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ভয়াবহতম সব অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে।

অপরাধের তীব্রতা উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করা দরকার বলে প্রতিবেদনে দাবি করে জাতিসংঘ। আগের দফায় দফায় অভিযোগের পর এই প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার।

কিন্তু সরকারের বাধার মুখে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পেরেও কীভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা?

তারই ব্যাখ্যা রয়েছে এখানে।

মিশন গঠন
২০১৭ সালের ২৪ মার্চ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমার ইস্যুতে একটি স্বাধীন তথ্য-অনুসন্ধান মিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই মিশন মিয়ানমারে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

এর ঠিক ৫ মাস পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্টে ‘জঙ্গি হামলার’ জবাব হিসেবে ব্যাপক পরিসরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামে হামলা শুরু করে।

নতুন করে শুরু ভয়াবহ হামলা তখন হয়ে ওঠে জাতিসংঘের ওই স্বাধীন মিশনের তদন্তের মূল ফোকাস। রাখাইন ছাড়াও কাচিন ও শান রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও তদন্ত করছিল।

মিশনের পক্ষ থেকে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে তিনবার চিঠি লিখে আবেদন জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

রোহিঙ্গা-গণহত্যা-মিয়ানমার-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর নির্যাতন
ক্রিস্টোফার সিডোটি

সাক্ষাৎকার
মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ (বাংলাদেশের হিসেবে ১১ লাখের মতো) রোহিঙ্গা এক বছরেরও বেশি ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। ফলে মিয়ানমারে ঢোকার সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্যে থাকা অসংখ্য মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছে জাতিসংঘের এই মিশন।

নিজেরা নির্যাতিত হয়েছে বা পালিয়ে আসার আগে নিজ চোখে সহিংসতা দেখেছে এমন ৮৭৫ জন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন অনুসন্ধানকারীরা।

তাদের জবানিতে এমন অনেক মর্মান্তিক গল্প উঠে এসেছে যা আগে প্রকাশ পায়নি। কারণ জাতিসংঘের তদন্তকারীরা শুধু তাদেরই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন যাদের সঙ্গে অন্য কোনো সংস্থা কথা বলেনি।

কারণ হিসেবে তদন্তের তিন প্রধানের অন্যতম ক্রিস্টোফার সিডোটি জানান, ‘আমরা চাইনি কোনোভাবে মানুষগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে অন্যদের প্রভাবে কোনো বিকৃতি আসুক।’

তবে পুরো সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার প্রথম শর্তই ছিল সাক্ষাৎকারদাতা কারও কোনো ‘ক্ষতি’ করা যাবে না। সিডোটি বলেন, ‘ওই মানুষগুলো এমনিতেই ভয়াবহভাবে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত ও সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছিল। আমাদের কর্মীদের যদি মনে হতো সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে কেউ আবারও মানসিক আঘাত পেতে পারে, তখন তার সাক্ষাৎকার আমরা নিতাম না।’

‘কোনো তথ্য-প্রমাণই এতটা জরুরি না যা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার একজন মানুষকে আবারও আঘাত দেবে,’ বলেন তিনি।রোহিঙ্গা-গণহত্যা-মিয়ানমার-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর নির্যাতন

প্রমাণ
শুধু এক ধরনের উৎসের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তো তাকে প্রমাণ বলে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। তাই সবসময়ই প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায় বা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাদেরকে পরস্পরের সঙ্গে যাচাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডোটি।

রোহিঙ্গাদের গ্রামে সেনাবাহিনীর হামলার ক্ষেত্রে আক্রান্তদের সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি ২০১৭ সালে টানা কয়েক মাসে রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর নানা ভিডিও, ছবি, দলিলাদি, স্যাটেলাইট ইমেজের মতো জিনিসগুলোকে উৎস হিসেবে নেয়া হয়েছিল।

যেমন, একবার তদন্তকারীরা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন রোহিঙ্গার কাছ থেকে জানলেন কোন দিন কোন সময় তাদের গ্রাম ধ্বংস করে দিয়েছিল সেনা সদস্যরা। তখন সেই সময়ের স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন।

স্যাটেলাইট ইমেজে তারা দেখতে পেলেন:

– ওই সময় পর্যন্ত রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে ৩৯২টি গ্রাম আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল

– পুরো অঞ্চলের মোট ভবনের প্রায় ৪০ শতাংশ, অর্থৎ ৩৭ হাজার ৭শ’ স্থাপনা ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল

– বিধ্বস্ত মোট স্থাপনার ৮০ শতাংশই সেনা অভিযানের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে পোড়ানো হয়েছিল।

স্যাটেলাইটের চেয়ে গ্রামের ভেতর থেকে ছবি পাওয়া ছিল অনেক বেশি কঠিন। কারণ রাখাইন থেকে বের হওয়ার সময় অনেকেই তল্লাশির মুখে পড়েছিল। তাদের সঙ্গে থাকা অর্থ, সোনা আর মোবাইল ফোন রেখে দেয়া হচ্ছিল। তারপরও অল্প যা ছবি ও ভিডিও পাওয়া গিয়েছিল তারই সদ্ব্যবহার করেন তদন্তকারীরা।

রোহিঙ্গা-গণহত্যা-মিয়ানমার-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর নির্যাতন
রাখাইনের থিট তোন নার গওয়া সোন গ্রাম (২৫ মে, ২০১৭)
রোহিঙ্গা-গণহত্যা-মিয়ানমার-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর নির্যাতন
রাখাইনের থিট তোন নার গওয়া সোন গ্রাম (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮)

অভিযুক্তদের তালিকা
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ও তার সহকারিসহ ৬ সিনিয়র সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার দাবি জানিয়ে তালিকা প্রকাশ করে।

তবে এই ৬ জনের দিকে আঙ্গুল তোলার পেছনে কোনো দালিলিক প্রমাণের সূত্র বা রেকর্ডিং ছিল না। ছিল নিরেট গবেষণা।

এক্ষেত্রে জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মিয়ানমার সরকার ও বিচার ব্যবস্থাকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা কিছু মানুষের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করতে হয়েছে। এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কাজ করা এক সামরিক উপদেষ্টাসহ বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ছিলেন।

সিডোটি জানান, এদের কাছ থেকে পাওয়া অসামান্য কিছু তথ্য ও নির্দেশনা থেকে তারা সিদ্ধান্তে আসেন, মিয়ানমারের পুরো সেনাবাহিনী এতটাই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত যে সেখানে এমন কিছুই ঘটে না যা সেনাপ্রধান বা তার উপ-সেনাপ্রধান জানেন না।

রোহিঙ্গা-গণহত্যা-মিয়ানমার-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর নির্যাতন
সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং

সেনা অভিযানের নির্দেশ দেয়া সিনিয়র কর্মকর্তা ছাড়াও যারা এসব ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত ছিল তাদেরকেও চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সিডোটি।

আইনি জটিলতা
ব্যাপক পরিসরে হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা আর আইনের সংজ্ঞায় তাকে গণহত্যা হিসেবে প্রমাণ করা দু’টি আলাদা বিষয়। ক্রিস্টোফার সিডোটি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যাকাণ্ডের বহু প্রমাণ খুব দ্রুতই পাওয়া গিয়েছিল এবং সেগুলোর ব্যাপ্তি ছিল হতবাক করার মতো।

‘কিন্তু গণহত্যা আরও অনেক বেশি জটিল একটি আইনি বিষয়।’

প্রতিবেদনটির ভাষায়, গণহত্যা হলো যখন ‘একজন ব্যক্তি কোনো জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পরিপূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো নিষিদ্ধ কাজ করে’।

এই সংজ্ঞায় মূল বিষয় হলো ‘উদ্দেশ্য’। জাতিসংঘের মিশনের বিশ্বাস, এ পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণ থেকে বর্মি সেনাবাহিনীর এই ‘উদ্দেশ্য’ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

রোহিঙ্গা-গণহত্যা-মিয়ানমার-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর নির্যাতন
অং সান সু চি

তবে সিডোটির ভাষায়, তদন্তের শেষের দিকে এসে তারা গণহত্যার প্রমাণের ব্যাপারে পরিষ্কার হয়েছেন। ‘আমাদের তিনজনের (তদন্ত প্রধান) কেউ এর আগে ভাবতেই পারিনি গণহত্যার প্রমাণ এত গুরুতর হবে।’

পরবর্তী পদক্ষেপ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ৬ সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। একই সঙ্গে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে সেনাবাহিনীর এই হত্যাযজ্ঞ থামাতে বা কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য।

এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতিসংঘের বিদায়ী মানবাধিকার প্রধান জাইদ রা’দ আল হুসেইন বলেছেন, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল

এছাড়া ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বা নতুন কোনো ট্রাইব্যুনালে নিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করা এবং মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বেশ কিছু সুপারিশ রাখা হয়েছে। কারণ স্পষ্টতই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অভিযোগগুলো নিজেরা তদন্ত করবে না।

322 ভিউ

Posted ৫:৪৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com