কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৪ ডিসেম্বর) :: রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নকে অবশেষে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল হিলে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসংক্রান্ত প্রস্তাবকে স্বাগত ও সমর্থন জানান। রোহিঙ্গা গণহত্যার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে এবং কৌশলগত কারণে ‘গণহত্যা’ বলা থেকে এখনো বিরত আছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় এখন ‘গণহত্যা’ বলতে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ আরো বাড়বে বলেই কূটনীতিকদের ধারণা।
সিএনএনের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ সদস্যদের উদ্যোগকে মহৎ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সভাপতি অ্যাড রয়েস গত বৃহস্পতিবার রাতে পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাবের সমর্থনে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন হয়েছে সেগুলোকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। এটি করতে না পারার অর্থ ওই অপরাধগুলোর হোতাদের আড়াল করা এবং অপরাধের জবাবদিহি উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করা। এই প্রস্তাব আনার মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিষদ তার দায়িত্ব পালন করেছে।’
রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটি ৩৯৪-১ ভোটে গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ ভোটের সময় প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ৩৯৫ সদস্যের মধ্যে ৩৯৪ জনই মনে করেন যে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার। ওই প্রস্তাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য তুলে ধরার পর রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াউ সো ওকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁরা এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি।
গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা নিপীড়নের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গত সেপ্টেম্বর মাসে কোনো ঘোষণা ছাড়াই গোপনে তার ওয়েবসাইটে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের তথ্যসংবলিত একটি প্রতিবেদনের সারাংশ প্রকাশ করে। রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে এটি ঠেকাতে সামরিকসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে। দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্র এখন এটি করতে চাইছে না।
এদিকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে রোহিঙ্গা গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বিচারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী দলের সুপারিশের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য একটি কাঠামো গড়ার প্রস্তাব এরই মধ্যে গৃহীত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল জাদুঘর এ মাসের শুরুর দিকে ঘোষণা করেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জোরালো তথ্য-প্রমাণ আছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের ওপর নিপীড়নের বিচারসহ বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের বিষয়টি এখনো অস্বীকার করে যাচ্ছে।
Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta