কক্সবাংলা ডটকম(২১ জানুয়ারি) :: সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা যাতে স্বদেশে ফিরে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজেদের বাড়িঘরে বসবাস করতে পারে তার জন্য সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিসহ কূটনীতিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ২১ জানুয়ারি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি বৈঠকে এ আশ্বাসের কথা জানান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের একথা বলেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দুই পর্বের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি, রাশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং রেডক্রসসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানান রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের এতদিন ধরে যে সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে আসছে তার জন্য ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তা যেন অব্যাহত থাকে তার অনুরোধ জানানোর জন্যই ক‚টনীতিকদের সঙ্গে গতকালের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারা সবাই বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে ফ্রেম অব এগ্রিমেন্ট এবং ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্টসহ তিনটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের যাচাই প্রক্রিয়া হবে পরিবারভিত্তিক। প্রতিটি ফর্মে পরিবার প্রধান এবং তার সদস্যদের নাম ও সংখ্যার উল্লেখ থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে যুক্ত করা হবে। এজন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। তবে মিয়ানমার নীতিগতভাবে রাজি হলেও এখনই চুক্তি করবে না, তাদের সময়মতো তারা এ চুক্তি করবে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি রেডক্রসকে যুক্ত করতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।
মন্ত্রী বলেন, তিনটি দেশ ইন্ডিয়া, চীন ও জাপান বাড়িঘর নির্মাণে কাজ করবে রোহিঙ্গাদের থাকার উপযোগী বাড়িঘর তৈরিসহ তাদের পুনর্বাসনের জন্য।
এ ছাড়া, মিয়ানমারের সঙ্গে যে পাঁচটি দেশের সীমান্ত রয়েছে, সেই সব দেশের- ভারত, বাংলাদেশ, চাপান, চীন ও লাওস- রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদের দেখার সুযোগ দেয়া হবে প্রত্যাবাসনসহ যাবতীয় বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমারে যাদের দূতাবাস রয়েছে তাদের রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধিকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ার কথাও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পূর্ব নির্ধারিত তারিখ আগামী কাল, ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে কি না তার নিশ্চিত করেননি এবং এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি মাহমুদ আলী।
মন্ত্রী বলেন, ২৩ তারিখের ব্যাপারে মন্তব্য করা খুব মুশকিল, আপনারা দেখতে পাবেন। তবে প্রক্রিয়া তো শুরু হয়ে গেছে। আর এটা তো একদিনে হয় না। এটা চলমান প্রক্রিয়া।
সাংবাদিকদের অন্য প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ যেতে না চাইলে কাউকে জোর করে বা ধাক্কা দিয়ে কি পাঠানো যাবে? যখন তারা দেখবে যে রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে, তখন তারা অবশ্যই যেতে চাইবে।
রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক কি না এবং কেন রোহিঙ্গারা এখনো আসছে- এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক তো আসবেই, আর তা হচ্ছে এখানের সুযোগ সুবিধা বাড়ার কারণেই। মন্ত্রী আরো জানান, রোহিঙ্গাদের যাতে অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে না রাখা হয় চুক্তিতে সে কথা বলা আছে।
বৈঠক শেষে, ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট এবং যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত অ্যালিসন বেøক বলেন, তারা স্বেচ্ছায় নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন দেখতে চান এবং এজন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবেন।
যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বেøক বলেন, আমরা তাদের স্বেচ্ছায় মর্যাদার সঙ্গে এবং স্থায়ীভাবে তাদের প্রত্যাবাসন দেখতে চাই।
ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রীংলা বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে ভারত। লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান বিশাল বোঝা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গারা যদি দেশে ফিরে যেতে না চায় তাহলে তা হবে আরো মারাত্মক। তবে যাতে তারা ফিরে যেতে চায় এবং গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারে তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আছি।
Posted ২:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta