কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৪ ফেব্রুয়ারী) :: বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রথম দফায় এক হাজার জনের নাম চূড়ান্ত করেছে মিয়ানমার। জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি হাউ দো সুয়ান মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে শুনানিতে এ কথা বলেছেন।
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে শুনানিতে হাউ দো সুয়ান বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর জন্য প্রথম দফায় নির্বাচিতদের তালিকা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভাতা, মৌলিক সেবা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে কোনো গণকবর খুঁজে পায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে হলে সহিংসতা ও সম্পদ ধ্বংস বন্ধ এবং রাখাইনের সর্বত্র সাহায্য কর্মীদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া জরুরি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন শুনানিতে বলেন, রোহিঙ্গারা এখনো মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে দেড় হাজার রোহিঙ্গা এসেছে বলে তিনি জানান।
একই মত ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেন, মিয়ানমার এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য মৃত্যুকূপ তৈরি করে রেখেছে। প্রথমে এপি ও পরে রয়টার্স রাখাইনে গণকবর পাওয়ার খবর জানিয়েছে। মিয়ানমারের প্রভাবশালীরা নিজেদের এসব অপকর্ম আড়াল করতে চায় বলেই সেখানে কাউকে যেতে দিচ্ছে না।
মার্কিন কূটনীতিক নিকি হ্যালি এ সময় অং সান সু চির কঠোর সমালোচনা করেন। মিয়ানমারের নেত্রীকে তিরস্কার করে তিনি বলেন, একসময়
শান্তির প্রতি, স্বদেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতার জন্য তার প্রশংসা করা হতো। শান্তি ও মানবতার লেশমাত্র তার মধ্যে অবশিষ্ট থাকলে নিদেনপক্ষে তিনি রাখাইনে আটকে পড়া ক্ষুধার্ত, বিপন্ন ও ধর্ষিত রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ দিতেন।
মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিয়োগের আহ্বান জানিয়ে নিকি হ্যালি বলেন, রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তার জবাব দিতে নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হয়েছে।
শুনানিতে ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, সুইডেন ও কাজাখস্তানের প্রতিনিধিরাও রাখাইনে পাওয়া গণকবরের কথা উল্লেখ করেন। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ফাঁসোয়া দিলাতে বলেন, রোহিঙ্গাদের হত্যার যে খবর রয়টার্স পরিবেশন করেছে, সে ঘটনাটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ফ্রান্সের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছে সুইডেনও। জাতিসংঘে সুইডেনের উপরাষ্ট্রদূত কার্ল স্ক শুনানিতে বলেন, পরিকল্পিত হামলার অসংখ্য ঘটনায় রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি কুয়েতের প্রতিনিধি মানসুর আইয়াদ আল-ওতাইবি বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান চালিয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিলে শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরবে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
Posted ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta