মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান হচ্ছে না

বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
286 ভিউ
রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান হচ্ছে না

কক্সবাংলা ডটকম(২৫ জুলাই) :: রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান হচ্ছে না—অবশেষে এ কথা জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনারও।

মঙ্গলবার ভোরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকটসহ মিয়ানমার পরিস্থিতি তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

বিশেষ দূত আরো জানান, মিয়ানমার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু এ বিষয়ে রাখাইনের সমাজ এখনো বিভক্ত। তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিও হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক। নাগরিকত্বের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার পরিবেশ নেই এবং ফেরার পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটিও বেশ সময়সাপেক্ষ—এমন আবহ নিয়েই গতকাল মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকটি শেষ হয়েছে। অতীতের মতো গতকালের বৈঠকেও কোনো প্রস্তাব বা বিবৃতি গৃহীত হয়নি। এমনকি মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও সদস্য দেশগুলো একমত হয়নি।

গতকালের বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বাইরের কোনো দেশের প্রতিনিধির এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না।

বৈঠক শেষে দূতদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে ঢাকা ও নিউ ইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা সংকট নিরাপত্তা পরিষদে বারবার আলোচনায় আসায় এর ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। কিন্তু বিশ্বের পরাশক্তিগুলো বৈঠকে বসেও যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তখন তা দায়সারা কাজে পরিণত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেন, এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের রোহিঙ্গা শিবির সফর এবং প্রত্যাবাসন ও অপরাধের জবাবদিহির ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করার পর নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার যায়ীদ রা’দ আল হুসেইনও গত মাসে নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) রোহিঙ্গা গণহত্যা তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বা আইসিসিতে পাঠানো প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যগুলো এখনো একমত নয়।

নিরাপত্তা পরিষদে গতকালের বৈঠক শেষে পরিষদের পক্ষে এর সভাপতি ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ওলফ স্কুগ এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। জানা গেছে, তাঁদের ওই ব্রিফিং অনানুষ্ঠানিক। কারণ তাঁদের বক্তব্য নিরাপত্তা পরিষদের দলিল হিসেবে নথিভুক্ত হবে না।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে নতুন করে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরুর পর নিরাপত্তা পরিষদ বেশ কয়েক দফা বৈঠক করলেও শুধু গত ৬ নভেম্বর পরিষদের সভাপতির বিবৃতি দলিল হিসেবে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৬ নভেম্বরের ওই বিবৃতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইন রাজ্যে আন্ত সম্প্রদায় সহিংসতা ও সামরিক বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ বন্ধ করে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।

ওই বৈঠকের প্রায় সাড়ে আট মাস পর গতকালের বৈঠক শেষে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি সাংবাদিকদের সামনে যে অনানুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছেন তাতেও মিয়ানমারে পরিবেশ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ওলফ স্কুগ বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতকে পরিষদের সদস্যরা সহযোগিতা করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি এবং এই দুই দেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর এ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকগুলো (এমওইউ) বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘পরিষদের সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের ওপর গুরুত্বারোপ অব্যাহত রেখেছে। গত ৩১ মে মিয়ানমার সরকার একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিকেও তারা আমলে নিয়েছে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এখানেই জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের অবস্থানগত পার্থক্য স্পষ্ট। যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধেই রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগ, তার দ্বারা কতটা স্বাধীন তদন্ত সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

অথচ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের তদন্ত কমিটি গঠনকে আমলে নিয়েছে। চীনসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশের আপত্তি সত্ত্বেও জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ গত বছর মার্চ মাসে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি তদন্তে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

মিয়ানমার ওই মিশনকে ঢুকতে না দেওয়ায় তারা সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ওই মিশনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা। অথচ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির বক্তব্যে ওই মিশনের কথাই আসেনি।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নেও সায় নেই :

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, মিয়ানমারকে তার আচরণ বদলাতে বাধ্য করতে নিরাপত্তা পরিষদ কি নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে না? জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে আমি বলব, দেরিতে হলেও ইতিবাচক কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে (মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে)—এমন মনোভাব পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আছে।

তবে এ উপলব্ধিও আছে যে এ যাবৎ নেওয়া অনেক উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। আর এটি নিয়েই আলোচনা চলছে। পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে এ বিষয়টিতে সম্পৃক্ত রয়েছে ও চাপ দিচ্ছে। আমার মনে হয়, আমরা ধীরগতিতে সামনে এগোচ্ছি।’

রাষ্ট্রদূত ওলফ স্কুগ আরো বলেন, ‘আমি যদি আমার দেশ সুইডেনের প্রেক্ষাপট থেকে বলি, তবে এই গতি এখনো অনেক মন্থর। তবে আমার মনে হয়, এই প্রক্রিয়ায় একসঙ্গে থাকা ও সামনে এগোনোও গুরুত্বপূর্ণ।’

নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনার বলেন, চাপে মিয়ানমার খুব একটা সাড়া দিচ্ছে তা তিনি মনে করেন না। তবে নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের। তিনি শুধু আড়াল থেকে কাজ করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বড় কোনো মতপার্থক্য না থাকলেও নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নে ‘ভেটো’ ক্ষমতাধর চীনের জোরালো আপত্তি রয়েছে।

অন্য রাজ্যগুলোর বিষয়েও কাজ করতে চান মহাসচিবের বিশেষ দূত : নেপিডোতে অফিস খোলার পাশাপাশি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে আবারও মিয়ানমার সফর করার কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনার।

তিনি বলেন, শুধু রাখাইন নয়, মিয়ানমারের অন্যত্রও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করা তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে তিনি কাচিন রাজ্যে যেতে চান। তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য মিয়ানমার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারকেও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।

ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গিনার তাঁর কাজে নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার এটি (সমর্থন ও সহযোগিতা) প্রয়োজন। কারণ এটি (রোহিঙ্গা সংকট) বেশ জটিল ইস্যু। আর এর দ্রুত সমাধান নেই। সময় লাগবে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নিরাপত্তা পরিষদে গতকালের বৈঠকটি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল বর্তমান সভাপতি সুইডেন। আগামী মাসে যুক্তরাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরেকটি বৈঠক হতে পারে।

286 ভিউ

Posted ৫:২৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com