রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

লাশ বুকে নিয়ে হাসার কৌশল এবং একজন মন্ত্রী

সোমবার, ৩০ জুলাই ২০১৮
388 ভিউ
লাশ বুকে নিয়ে হাসার কৌশল এবং একজন মন্ত্রী

কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জুলাই) :: নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের হাসিটা অনেকের বুকে তীরের মতো বিদ্ধ হয়েছে। এমন করুণ একটি হত্যাকাণ্ডকে হাসি হাসি মুখে মোকাবেলার এই রাজনীতি অসহায়ভাবে আমাদের দেখে যেতে হচ্ছে। জানি অনেকেই এই বাক্যগুলো দেখে সমালোচনা শুরু করবেন। কিন্তু প্রিয় পাঠকদের অনুরোধ করব মন্তব্য করার আগে একটু স্থির হোন, পড়ুন এবং অনুধাবন করুন।

আপনারা অনেকেই মনে করতে পারবেন, নব্বইয়ের দশকের একটি সড়ক দুর্ঘটনা একজন জনপ্রিয় অভিনেতাকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নামিয়েছিলো এবং এখনো তিনি নিরাপদ সড়কের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আমরা আজও ভুলতে পারিনি চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মৃত্যুকে। এভাবে সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

গতকাল যখন অপেক্ষারত শিক্ষার্থীদের উপর বাস উঠিয়ে দেয়া হলো তখন সেখানে সড়কের বেহাল দশা ছিল না কিংবা ছিলো না পথচারীদের কোন ভুল, এমনকি এটাকে দুর্ঘটনাও বলা যাচ্ছে না। দুটি বাস যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে গিয়ে যাত্রীদেরই খুন করে বসলো। কুর্মিটোলা এলাকা যখন শোক এবং অপরাধের ভারে বিষন্ন তখন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান সচিবালয়ের সভাকক্ষে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।

সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, মন্ত্রীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে (!)। আসলে মন্ত্রীর এই হাসিটা ছিলো পরিকল্পিত তিনি মংলা বন্দরের জন্য মোবাইল হারবার ক্রেন কেনার চুক্তির জন্য আনন্দিত ছিলেন। আর সেই খুশি খুশি আমেজ নিয়েই সম্মুখীন হয়েছিলেন সাংবাদিকদের, মাঝপথে তার শ্যালকের গাড়ির এমন বেপরোয়া কাজের কথা তোলায় তিনি বিচলিত হয়েছেন বটে কিন্তু দু’জনের মৃত্যু তাকে খুব একটা আন্দোলিত করতে পারে নি। তাই হাসি মুখেই তিনি তাদের শাস্তি কথা বলেন। বিধান মোতাবেক বিচার করার আশ্বাস দিলেন।

তিনি এটিকে তার মন্ত্রণালয়ের নয় বলে এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে হাসি দিয়ে তার শ্যালক নান্নু মিয়ার গাড়ী যে খুনের ঘটনাটা ঘটালো তা হাল্কা করার চেষ্টা করলেন। নিহত ছাত্রী দিয়া’র বাবাও পরিবহন শ্রমিক নেতা, তিনিও জানেন নান্নু মিয়া ক্ষমতা সম্পর্কে। সেই নান্নু মিয়া যখন এই পরিবহনের মালিক, মন্ত্রীর শ্যালক তখন আসলে বিচারের কতটা কি হবে আশা করি পাঠক স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছেন।

সব কিছু ছাপিয়ে যেটার ঘোর আসলে কাটাতে পারছি না তা হল, নৌপরিবহন মন্ত্রী যে বিশেষ উদাহরণ টানলেন তা অবাক করার মতো। ভারতের মহারাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় নাকি ৩৩ জন মারা গেছে। তারপরও সেখানে কোন কথা হয় নি। খালি বাংলাদেশেই নাকি এটা নিয়ে বেশি কথা হয়। এই উদাহরণটা যেন তাজা লাশগুলোর সাথে তামাশা করছে।

তার মানে আমাদের সন্তানকে রাস্তায় খুন করা হলে, তার গায়ের উপর দিয়ে গাড়ি তুলে দেয়া হলেও আমরা কী কথা বলতে পারবো না? নাকি আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ৩৩ জন নিহত হওয়া পর্যন্ত। ৩৩ জনের নিচে কোন লাশকে কি মন্ত্রী সাহেব আমলে নিতে নারাজ?

যদি তাই হয় তবে নৌপরিবহন মন্ত্রীকে একটা ছোট কাজ করতে বলবো। দৈনিক পত্রিকার সার্চ অপশনে যান তারপর ‘সড়ক’ শব্দটি লিখুন এবং ইন্টার চাপুন। তারপর গোনা শুরু করুন দেখুন শ্রেফ জুলাইতে কত জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা বিশের অধিক।

এবার আসুন একটি সুদীর্ঘ পরিসংখ্যান দেখি, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৪৭১ জন। ২৩৫৩ টি আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৭৭৩ জন পথচারী এবং ৫৪৮ জন মোটর সাইকেল আরোহী। পথচারী নিহত হওয়ার সংখ্যাটা আমাদের জানিয়ে দেয় চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা সম্পর্কে। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে ৭৩৯৭। এই সংখ্যাটাই কি সড়ক দুর্ঘটনাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য যথেষ্ঠ না?

মাত্র কয়েকদিন আগে মিরপুর-০১ শিক্ষার্থীরা সড়ক বন্ধ করে রাখেছিল এমন দুর্ঘটনার জন্য। এবার বাস তুলে দেয়া হলো শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর দিয়ে। মরার উপর খাড়ার ঘা’য়ের মতো আমাদের মন্ত্রী মহোদয় হাসি মুখেই ট্যাকেল করলেন পুরো ব্যাপারটা (!)

আবার সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর ‘বন্দর নিয়ে প্রশ্ন করুন’ – এমন চাওয়াটা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তিনি হয়তো উত্তর মুখস্থ করে এসেছেন। তাই এই প্রশ্নে তিনি বিব্রত। প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি আদৌ মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য? এই সরকার বৈধ না এই কথাটা এখন আর নতুন করে বলাটা খুব একটা প্রয়োজনীয় না। কিন্তু লাশ নিয়ে যিনি সহাস্যবদনে সাংবাদিকদের সামনে হাসতে পারেন তিনি কোন অর্থেই মন্ত্রী হতে পারেন না। কারণ লাশ মাত্রই সমস্ত পার্থিব হিংসার বাইরের বিষয়। ক্ষমতার কোন উন্মাদনার এখতিয়ার নাই আমাদের সন্তানদের লাশ নিয়ে মশকারি করার।

জনগণের সাথে সরকারদলীয় লোকজনের এমন আচরণ কাম্য নয় এটা হয়তো সুশীল সাংবাদিকরা বলে দায় সারবেন। এই নিষ্ঠুর প্রহসন সহ্য করার শক্তি বাংলাদেশের থাকলেও নিহত পরিবারের নাই -এটা আমি বাজি ধরে বলতে পারি। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের মিথ্যাচার ও জনগনের সাথে কৌতুক করা যেন একটি নিয়মিত শাসনতান্ত্রিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য।

কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দু’মুখো বক্তব্য বাদ দিলেও থেকে যায় কৃষি মন্ত্রীর ‘রাজাকারের বাচ্চা’র তত্ত্ব। আর এখন আবার দোষীদের বিচারের জন্য অনুসরণ করতে হবে ভারতকে। ভারতে ৩৩ জন নিহতের পরেও যেহেতু কোন কথা ওঠেনি, সুতরাং আপনারাও কোন কথা বলতে পারবেন না! এমন তত্ত্বকেও স্বীকার করতে হবে আমাদের!

এখনো যদি বাস চালকদের বিচারের আওয়তায় না আনা হয় তবে তার জন্য অবশ্য দায়ী থাকবে প্রশাসন আর সেই প্রশাসনে আমরা দেখতে পাব নৌপরিবহন মন্ত্রীকে এবং তার শ্যালক নান্নু মিয়াদের ছবি। আর প্রতিদিন বাড়াতে থাকবো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু!

এই অবস্থায় মন্ত্রীর মতো আপনজনের লাশ নিয়ে হাসার ক্ষমতা না থাকলে হয়তো আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যথেষ্ঠ যোগ্য হয়ে উঠতে পারব না। তাই হাসুন…লাশ বুকে নিয়ে প্রাণ ভরে হাসুন!

388 ভিউ

Posted ৮:৪৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ৩০ জুলাই ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com