কক্সবাংলা ডটকম(৫ ডিসেম্বর) :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসন বণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক দীর্ঘ হওয়ায় সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ১০টা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট শরিকদের বৈঠক হলেও কোন কোন আসনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা জানানো হয়নি।
১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শরিক দলের নেতাদের জানিয়ে দেবেন কাকে কোন আসন ছাড় দেওয়া হচ্ছে। গত রাতে গণভবনে জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত আসে।
শরিকরা নৌকা পাবে কি না- জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শরিকরা নৌকাই পাবে। নৌকা না দিলে আমরা গণভবনে কেন গেছি?’
কতটি আসন ছাড় দেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জানিয়েছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁর (শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে আমাদের জানিয়ে দেবেন।’
গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেছেন। ভোটাররা যেন উপস্থিত হয় সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। কাউকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ প্রতিযোগিতামূলক ভোট চান তিনি।’
সূত্রমতে, জোটের শরিক দলগুলোকে এবার আসন ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। সে কারণে কোনও আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করবে না দলটি। জোট শরিকদেরও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-২ বা ৩, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২ ও তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ আসনে ছাড়ের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য করা হতে পারে।
সন্ধ্যা ৬টার পর বৈঠক শুরু হয় ১৪ দলের। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও জোটপ্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্র্টির ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, ডা. শাহাদাৎ হোসেনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই এশিয়া ক্লাইমেট মবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ১৪ দলের নেতারা।
একাধিক সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জোট শরিকদের মধ্যে সৃষ্ট শঙ্কা-ধোঁয়াশা কেটে গেছে। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। সেখানে কোন দল কতটি আসন পাবে সে বিষয়ে জানানো হতে পারে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো ১৪-দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে কিছু আসনে ছাড় পাওয়ারও আশ্বাস মিলেছে। তবে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে ঠিক কতটি আসন এবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হবে তা চূড়ান্তভাবে বলা হয়নি। ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সবকিছু পরিষ্কার করবেন ওবায়দুল কাদের।
এ বছরের ১৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক হয়। এতে জোটপ্রধান শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের পরও আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়া এবং আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জোটগতভাবে ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন। এ নিয়ে এতদিন চিন্তায় ছিলেন শরিক দলগুলোর নেতারা। তাঁরা সবাই জোটপ্রধান শেখ হাসিনার দিকেই চেয়ে ছিলেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁদের শঙ্কা দূর হয়ে যায়, কপাল খুলে যায় জোটের কজন শীর্ষ নেতার।
১৪ দল গঠনের পর বিগত তিনটি নির্বাচন জোটগতভাবেই হয়েছে। আসন বণ্টন নিয়েও আগেভাগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগেই জোটের আসন বণ্টনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে এবারের নির্বাচনের বিষয়ে তেমনটি ঘটেনি। আসন বণ্টনের বিষয়টি মনোনয়নপত্র দাখিলের পরও চূড়ান্ত না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মূলত ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তবে সোমবারের বৈঠকের পর তা অনেকটাই কেটে গেছে।
১৪ দল সূত্রে জানা গেছে, এবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আসন চেয়েছিল আটটি। একাদশ জাতীয় সংসদে দলটির সংসদ সদস্য আছেন তিনজন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আসন চেয়েছিল সাতটি। এ সংসদে দলটির সদস্য আছেন তিনজন। তরিকত ফেডারেশনের বর্তমানে একজন সংসদ সদস্য থাকলেও এবার পাঁচটি আসন চেয়ে তালিকা জমা দিয়েছিল। জাতীয় পার্টি (জেপি) পাঁচটি আসন দাবি করলেও বর্তমানে দলটির একজন সংসদ সদস্য আছেন। সাম্যবাদী দলের কোনো সংসদ সদস্য না থাকলেও একটি আসন চেয়েছিল তারা। জোটের বাকি শরিক দলগুলোর বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই, তাদের প্রত্যাশাও ছিল কম।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছেন, জোট নিয়ে সময় ক্ষেপণ কৌশলের অংশ। জোটগতভাবে নির্বাচন হবে, এমন ঘোষণা আগে দিলে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আওয়ামী লীগের মূল চিন্তা বেশি দলকে ভোটে আনা এবং ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো। এখন ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কিছুটা নির্ভার ক্ষমতাসীনরা।
একাদশ সংসদে আটটি আসনে ১৪ দলের শরিকদের এমপি রয়েছেন। নির্বাচনি শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশের দখলে রয়েছে দুটি আসন। এর বাইরে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আসন রয়েছে ২৩টি। তবে দ্বাদশ নির্বাচনে ১৪ দলের সঙ্গে সমঝোতা হলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা আদৌ হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব আসেনি, এলে দেখা যাবে।
Posted ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta