রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

শোকে-শক্তিতে বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭
1041 ভিউ
শোকে-শক্তিতে বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

নীলোৎপল বড়–য়া(১৪ আগস্ট) :: বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কোন রকম জরিপেই তিনি তাই হতেন, তর্কাতীত ও নিরঙ্কুশভাবে। কারণ তিনি বাঙালিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন। এর চেয়ে বড় কাজ আর কিছুই হতে পারেনা। তিনিই হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে প্রথম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন। যদিও একটি নৃগোষ্ঠী হিসাবে বাঙালির অস্থিত্ব ছিল হাজার বছর আগে থেকেই।

কিন্তু তা কখনই তার নিজস্ব শিল্প, সাহিত্য, ভাষা ও সংস্কৃতি সমেত একটি স্বতন্ত্র ও গণ্য জাতিসত্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি বা কেউ গ্রাহ্য করেনি, জাতীয় ও আর্ন্তজাতীয় ভাবে। শেখ মুজিবের হাতেই বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে জন্ম নেয় স্বধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র।

আর এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে বলেই পৃথিবীর বুকে আজকে একটি স্বাধীন জাতিসত্তার নাম হলো বাঙালি। তাইতো শেখ মুজিব বাঙালি জাতির পিতা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধু যদি বাংলাদেশকে স্বাধীন না করতেন, আজকের এই আত্মপরিচয়ের বাঙালি জাতি কি প্রতিষ্ঠা পেত?

বাংলাদেশ একদিনে এবং একটি ঘটনার মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে শেখ মুজিবের সাথে আরো অনেকের সংগ্রামও ছিল। তবে নিশ্চত, তারা সবাই মিলেও শেখ মুজিব হয় না। আর তা হয় না বলেই শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিবই জাতির পিতা। তাঁরা যে সংগ্রাম করেছিলেন সে সব সংগ্রামের জন্মদাতাইতো শেখ মুজিব। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে যে ঘটনা প্রবাহ তার নেতৃত্বে ও কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিলেন শেখ মুজিব।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি জাতি অভিভাবকহীন হয়ে পড়লে তিনি বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন। ’৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন এবং সবশেষে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ- সব ঘটনার নেতৃত্বে ও কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকেই তিনি স্বাধীন বৃহত্তর বাংলার জন্য আন্দোলনে জড়িত হয়েছিলেন। আর সোহরাওয়ার্দী ও শরৎবাবুর সে আন্দোলন যখন ব্যর্থ হয় এবং ’৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টি হয় তখন থেকেই শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি কখনো ‘পূর্ব-পাকিস্তান’ কথাটা উচ্চারণ করতে চাইতেন না, বলতেন ‘পূর্ব-বাংলা’।

এর ধারাবাহিকতায় ’৬৯ এর ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু প্রথম পূর্ব-পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ ঘোষনা করেন। আর বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশের জন্যই ’৭০ এর নির্বাচনে জনগণ তাঁেক ও আওয়ামীলীগকে ভোট দেয় এবং ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

শুরুটা হয়েছিল একটা ’না’ দিয়ে। মিশন স্কুলের সেই কিশোর ছাত্রটি বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শের-এ বাংলা একে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে স্কুল-হোস্টেলের ছাদ মেরামতের দাবি নিয়ে দাঁড়ালে, হেডমাস্টার মহাশয় বিরক্ত হয়ে তাকে সরে যেতে বলেন। তখন কিশোর মুজিব বলে উঠেন- ‘না’। এই ‘না’ বৈষম্যকে অস্বীকারের, ভয়কে অগ্রাহ্যের প্রতীক। এই ‘না’ আপোষহীনতা ও দাবি আদায়ের প্রতীক। এই ‘না’ অন্যায় মেনে না নেওয়ার প্রতীক। কালক্রমে এই ‘না’ থেকেই কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ।

৭ মার্চের ভাষণ, যেখানে ঘোষিত হয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, তা ছিল এই ‘না’-এর বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধের মূল উজ্জীবক শক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর এই ‘না’। এতে ছিল অমেয় শক্তি যার বলে তিনি সারা দেশের মানুষকে ‘না’ মন্ত্রে দীক্ষিত করে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করতে পেরেছিলেন। যে ‘না’ শক্তি বলে তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সে ‘না’ তে অবিচল থাকতে গিয়ে তাঁকে ভোগ করতে হয়েছিল অসহনীয় কারাযন্ত্রণা।

২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসন আমলে প্রায় ১২ বছর তাঁকে দেশের বিভিন্ন জেলে কারাভোগ করতে হয়েছিল। শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবসের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। পাকিস্তান সময়ে ‘কারাবরণ’ শব্দটা শেখ মুজিবের জীবনের প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল। আর জেলখানা যেন তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি। এক মামলায় জামিন তো আরেক মামলায় জেলগেট থেকেই গ্রেপ্তার। আবার মুক্তি পেয়ে জেলগেট থেকেই ছুটলেন জনসভায়। সেখানে শাসকদের বিরুদ্ধে ভাষণ দিতে গিয়ে আবার গ্রেপ্তার। নেলসন ম্যান্ডেলার পর সারা পৃথিবীতে আর কেউ দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এতো বেশি কারাভোগ করেননি।

বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর মতো এতো ত্যাগ কোন বাঙালি কোনদিন স্বীকার করেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী রেখে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরিকল্পনা হচ্ছিল আর তাঁর সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন- তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তিনি বলে যাবেন- “আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ, আমাকে ফাঁসি দাও দুঃখ নাই, শুধু আমার লাশটা বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও”।

বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে খুব ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আপনার সবচেয়ে বড় গুণ কী? বিদেশি সাংবাদিকের করা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “এই দেশের মানুষকে আমি খুব ভালোবাসি”। এর পর যখন জিজ্ঞেস করেন- আপনার বড় দোষ কী, সেই প্রশ্নের উত্তরেও তিনি বলেছিলেন, “এই দেশের মানুষকে আমি বড় বেশি ভালোবাসি।” তাঁর জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্ব এতো উচুঁ ছিল যে তিনি কখনো কল্পনাই করতে পারেননি, এ দেশের কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারে।

কিন্তু তিনি যখন স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে শোষণহীন ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কয়েমের নীতি গ্রহণ করেন তখন পাকিস্তানি উপনিবেশ যুগের সৃষ্ট অতিরিক্ত সুবিধাভোগী শহুরে এলিট শ্রেণি এবং সিভিল ও মিলিটারি ব্যুরোক্র্যাসির স্বার্থ- সুবিধায় টান পড়ল। আরেক দিকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতীয়তাবাদী ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য গ্রহণ করেন প্রগতিশীল জাতীয় ও আন্তর্জাতীয় নীতি।

আর তখনই শুরু হলো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এক হয়ে বঙ্গবন্ধুর জাতায়তাবাদী নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর এই নৃশংসতম হত্যাকা- বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটিয়েছে তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে বর্তমান প্রজন্মকেও সংগ্রাম করতে হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে আবার শুরু হয়েছিলো অরাজকতার রাজনীতি। আর মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছিলো পাকিস্তানি চেতনা। যার সম্পর্কে সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত মন্তব্য করেছে- ঃড়ি ৎবমরসবং ড়ভ ফরৎঃু ঢ়ড়ষরঃরপং। তারা ছিলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সুবিধাভোগী। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুটা ছিলো সমগ্র জাতীর জন্য এক ট্র্যাজেডি। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনারও মৃত্যু ঘটেছিলো। তাঁর ইমেজ ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বিশ্ব-দরবারে এক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চতায় উঠতে পারত। কিন্তু সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো জাতি তা পারেনি।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশ ছোঁয়া। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিলো হিমালয়ের চেয়েও উচুঁ। তাঁকে হত্যা করে বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে দিতে পারেনি। আর তা কোনদিন পারবেও না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি যবনিকাপাত হয়েছে বটে। কিন্তু ইতিহাস তার আপন গতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করে তুলছে এবং ভবিষ্যতেও তুলবে। শুধু রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি নয়, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে এক অনন্য উপাদান হয়ে উঠেছেন। যতই দিন যাবে বঙ্গবন্ধু তার আপন মহিমায় চিরভাস্বার হয়ে উঠবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।

লেখক: শিক্ষক, হাজী এম. এ. কালাম ডিগ্রি কলেজ, নাইক্ষ্যংছড়ি।

1041 ভিউ

Posted ৮:২১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com