কক্সবাংলা ডটকম(৮ আগস্ট) :: সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের গ্রাহক বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলী হোসেন (ছদ্ম নাম)। গত ১১ জুলাই তিন লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে ওই শাখায় যান তিনি। ব্যাংকের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, আপাতত তিন লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সরবরাহ বন্ধ আছে। সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার প্রস্তুতি না থাকায় ফিরে যান তিনি। গত রোববার আবার গেলে একই কথা জানানো হয়। কারণ জানতে চাইলে শাখা থেকে বলা হয়, সরকার সঞ্চয়পত্রের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, নানা অজুহাতে অনেককেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে অন্য কোনো অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রেজারি কার্যক্রম পরিচালনাকারী এ ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা অনেক সময় সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বেশিরভাগ বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক নানা অজুহাতে কয়েক মাস ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অনীহা দেখায়। আমানত নিয়ে টানাটানির মধ্যে এখন এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সুদহার অনেক বেশি হওয়ায় টাকা ব্যাংকে আমানত হিসেবে না রেখে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ব্যাংকের আমানতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে ব্যাংকাররা নিরুৎসাহিত করতে পারেন। পোস্ট অফিসে গিয়েও সঞ্চয়পত্র না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্র কিনতে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে বেশি ভিড় করছেন গ্রাহকরা। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা নেই। তবে সঞ্চয়পত্রে এখন আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ থাকায় সরকারের কিছুটা অনীহা রয়েছে। কেননা সরকার বর্তমানে ব্যাংক থেকে ৫-৬ শতাংশ সুদে ঋণ পেলেও সঞ্চয়পত্রে গুনতে হচ্ছে ১১ শতাংশের বেশি। ব্যাংকগুলোও সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করার দাবি জানাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠান শেষে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমাবে না সরকার।
বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সঞ্চয়পত্র কিনতে ব্যাংকের শাখায় গিয়ে না পেয়ে ফিরে আসার অনেক অভিযোগ তারাও পাচ্ছেন। সঞ্চয়পত্র নেই কিংবা যে মূল্যমানের চাওয়া হচ্ছে, সেই মূল্যমানের নেই- এ রকম নানা অজুহাতে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
আমানতের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়তে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারি এক নির্দেশনার মাধ্যমে একশ’ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৯ টাকা ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এডিআর কমানোর এ সিদ্ধান্তের পর সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসা ঋণের সুদ বেড়ে আবার দুই অঙ্কে ওঠে। পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হলেও সুদহার না কমায় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার আলোকে গত ১ জুলাই থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেয় ব্যাংকগুলো। আর সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যদিও বেশিরভাগ ব্যাংক এখনও সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি। সরকারের চাপচাপির মধ্যে আজ থেকে সব ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অবশ্য এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর জোর দাবি ছিল ব্যাংকগুলোর। তবে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় তারা আশাহত হয়েছেন।
Posted ৪:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta