মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান

সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২
70 ভিউ
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান

কক্সবাংলা ডটকম :: রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা ৩৫ বছর বয়সী শ্যারো কখনোই ভাবেননি, এক সময় তিনি প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী অন্দোলনে যোগ দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা শ্যারন আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিজেই স্লোগান দিয়েছেন, ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু হোক!’। তার ভেতরেও যে দেশের শাসকদের বিরুদ্ধে এতটা রাগ-ক্ষোভ জন্মেছিল, তা আন্দোলনে যোগ দেওয়া আগে কখনোই জানতেন না তিনি।

পুলিশি হেফাজতে ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। শ্যারো জানান, গত প্রায় ৩ সপ্তাহে এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে কয়েক ডজন মারা গেছে এবং সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে আরও কয়েকশো মানুষ।

বিক্ষোভের অন্যতম হটস্পট উত্তর-পশ্চিম ইরানের কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সানন্দাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন “এখানে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ এবং অস্থিতিশীল।”

টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার সার্ভিসের মাধ্যমে বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) তিনি বলেন, “আমরা কেবল টাইম-বোমার মতো হঠাৎ কিছু হওয়ার অপেক্ষা করছি।”

রাজধানী থেকে ৩০০ মাইল দূরে সানন্দাজের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

মূলত নারী ও তরুণ সমাজের নেতৃত্বে এলাকায় চলছে স্বতঃস্ফূর্ত গণসমাবেশ। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ।

সানন্দজে ছয়জন নারী বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলেছে এপি। তারা জানান, মারধর, গ্রেপ্তার, গোলাবারুদ ব্যবহার এবং ইন্টারনেট সংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আন্দোলন বন্ধের চেষ্টা করছে সরকার। এমন অবস্থায় তাদের পক্ষেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে, তবে এরপরেও তারা প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।

মাহসা আমিনির দাফন থেকে শুরু আন্দোলন

তিন সপ্তাহ আগে, তেহরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর খবর তার নিজ এলাকা কুর্দিস্তানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওই প্রদেশের রাজধানী সানন্দাজ থেকেই শুরু হয় মূল আন্দোলন।

১৭ সেপ্টেম্বর যখন সাক্কেজ শহরে আমিনির দাফন চলছিল, মূলত সেখান থেকেই আন্দোলনের সূত্রপাত। ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ শ্লোগানে ভারী হয়ে ওঠে আমিনির শেষযাত্রা। সাধারণ মানুষের মনে দানা বাধতে থাকে সরকারবিরোধী ক্ষোভ।

সাক্কেজের ৩৮ বছর বয়সী পোশাক ডিজাইনার আফসানা জানান, বিক্ষোভকারীরা যেনো চড়াও হওয়ার সুযোগ না পায়, এজন্য মাহসাকে দ্রুত দাফন করার চাপ দেওয়া হচ্ছিল আমিনি পরিবারের ওপর। তিনিও সেদিন মাহসা আমিনির শেষযাত্রায় কবরস্থান থেকে সিটি স্কয়ার পর্যন্ত মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।

৩২ বছর বয়সী গৃহবধূ রোজান আমিনিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন তেহরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের হেফাজতে মারা গেছেন ২২ বছরের ওই তরুণী, তখন তিনিও রাস্তায় নামতে বাধ্য হন।

তিনি বলেন, “আমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল।”

২০১৩ সালে আমিনির মতো তিনিও এক বন্ধুর সঙ্গে রাজধানীতে গিয়েছিলেন; সেখানে নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। কারণ তার আবায়া বা ঢিলেঢালা পোশাক (ইরানের নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক পোশাক) ছোট ছিল। আমিনির মতো তাকেও ওই একই জায়গায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অপরাধের ঘোষণাপত্রে আঙুলের ছাপ বসিয়ে তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।

রোজান বলেন, “আমিনির জায়গায় আমিও হতে পারতাম।”

আন্দোলনে গিয়ে একজন বয়স্ক নারীকে প্রতিবাদস্বরূপ মাথার হিজাব খুলে ফেলতে দেখে তিনিও অনুপ্রাণিত হন।

“তাকে দেখে আমিও একই কাজ করতে অনুপ্রাণিত বোধ করেছি,” বলেন রোজান।

আন্দোলন দমনে ইরান সরকার

দাফনের পর প্রথম তিন দিনের মাথায় সানন্দাজে শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর গ্রাপ্তার অভিযান। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে এ অভিযান শুরু করে প্রশাসন, যা এখনও চলছে আন্দোলনরত শহরগুলোতে। দেশে পরিচিত এক্টিভিস্ট ও সংগঠকদের টার্গেট করে গ্রেপ্তার চলতে থাকে।

দুনিয়া নামের একজন আইনজীবী বলেন, তিনি নারী অধিকার কর্মীদের ছোট একটি দলের সদস্য। তারা এই বিক্ষোভ সংগঠিত করতে সাহায্য করেছেন। তারা বাণিজ্যিক ধর্মঘটের ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে দোকানদারদেরকে অনুরোধও করেছেন।

দুনিয়া জানান, “আমাদের দলের প্রায় সব নারীই এখন জেলে।”

বিক্ষোভ দমাতে সরকার শহরের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে আন্দোলনকারীদের জন্য।

শ্যারো বলেন, “আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে কী ঘটছে তা বুঝতে পারি না।” ইন্টারনেট সংযোগ প্রায়শই গভীর রাতে বা কাজের সময় ফেরে, কিন্তু বিকেলের দিকে দ্রুতই আবার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এই সময়টাতেই বিক্ষোভে জড়ো হয় মানুষ।

বিক্ষোভে মানুষ রাস্তায়  জড়ো হলেই সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস এবং পেলেট বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
ফ্রান্স ভিত্তিক কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, শনিবারের (৮ অক্টোবর) বিক্ষোভেও সানন্দাজে দুই বিক্ষোভকারী সরাসরি আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

তবে, এসব অভিযোগই অস্বীকার করছে ইব্রাহিম রাইসির নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। তাদের দাবি, বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের চক্রান্তের শিকার সরকার।

বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতেও ভয় পাচ্ছেন। কারণ সেখানেও তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারের প্রতি জনগণের অবাধ্যতা

সরকারের বিরুদ্ধে রাগ গভীর হচ্ছে জনগণের। সানন্দাজ শহরটি মূলত তিনটি কারণে হিজাব বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এক, এই শহরেই রয়েছে কুর্দি প্রতিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস; দুই, এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য; এবং তিন, এ অঞ্চলের নারী অধিকার সক্রিয়তার দীর্ঘ ইতিহাস।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে প্রতিবাদের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ২০০৯ সালে হয়েছিল সবচেয়ে বড় আন্দোলন। তবে এবারের আন্দোলন তারচেয়েও বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে। সেই ২০০৯ সাল থেকে সরকারের প্রতি জনগণের ক্রমাগত অবাধ্যতা এবং দাবিগুলো ইরানের জন্য বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

ইরানের বেশিরভাগের মতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং করোনভাইরাস মহামারি অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ঊর্ধ্বমুখী মুদ্রাস্ফীতিতে ইরানের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে সানন্দজ একটি। রাজধানী থেকে অনেক দূরে, দেশের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত এই শহরের মানুষ এখন সরকারকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে।

অন্দোলনের তৃতীয় সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। স্কুলের মেয়েরা নিজেদের মাথার হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের ক্যাম্পাসে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। এতে তাদের ওপর চড়াও হয় নিরাপত্তা বাহিনী। অন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কার পার্কিং এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ক্লাস বর্জনের পরিকল্পনা করছেন।

পোশাকের ডিজাইনার আফসানা জানান, তিনি মাথায় স্কার্ফ পরতে পছন্দ করেন। কিন্তু তিনি এখন প্রতিবাদ করছেন, কারণ এটি তার স্বতঃস্ফূর্ত পছন্দ ছিল না, এটি বাধ্যতামূলকভাবে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আফসানার বাবা-মা তাকে নিরাপত্তার ভয়ে বাড়িতে থাকতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে বেরিয়ে এসেছেন। শহরের রাস্তায় তার মতোই প্রতিবাদকারীদের খোঁজে নেমেছেন তিনি।

“আমি ক্ষুব্ধ; কিন্তু ভীত নই- আমাদের এই অনুভূতিটুকুই রাজপথে উপচে পড়া দরকার,” বলেন আফসানা।

সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস 

70 ভিউ

Posted ৭:৪৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com