রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ জালিয়াতির ৭ কারণ

বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭
292 ভিউ
সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ জালিয়াতির ৭ কারণ

কক্সবাংলা ডটকম(৭ ডিসেম্বর) :: সরকারি ব্যাংকগুলোতে বারবার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে সাতটি কারণ। এগুলো হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে রাজনীতিবিদদের নিয়োগ, সরকার সমর্থিত সিবিএ নেতাদের দৌরাত্ম্য, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে দলকানা কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলায় অক্ষমতা, সঠিক নজরদারি না করা, দলিলসহ জমিজমা সংক্রান্ত কাগজপত্র বোঝার ক্ষেত্রে অদক্ষতা ও মাঠ জরিপে ত্রুটি থাকা।

নীতিনির্ধারকরাও সরকারি কয়েকটি ব্যাংকে সংঘটিত এসব বিষয় জানেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয় না। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা। ভেঙে পড়ছে পুরো ব্যাংকিং সিস্টেম। লোপাট হচ্ছে জনগণের আমানত। এক্ষেত্রে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকেন পরিচালনা পর্ষদের নেতারা। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে শাস্তি পান ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের লাগামহীন দুর্নীতির খেসারত দিচ্ছে সরকার। বছর শেষে মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে ব্যাংক। এ কারণে সরকারকে সেই ঘাটতি মেটাতে দিতে হয় মূলধন।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চারটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালেও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোকে আরও ৬ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত আট বছরের মধ্যে সাত বছরই পুনঃমূলধনের নামে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার আরও দুই হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। গত ৯ অর্থবছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা যোগান পেয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার মনোনীতরা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে নিজেদের পছন্দের বিষয়গুলো তুলে অনুমোদন করিয়ে নেন। অনেক সময় কেউ কেউ তা অনুমোদনের জন্য বোর্ডে চাপও সৃষ্টি করেন। আইনগত বাধা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তা বুঝতে কিংবা যুক্তি মানতে চান না। যে কোনোভাবে হোক নিজেদের বিষয়গুলো অনুমোদন করানোই থাকে তাদের উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে ব্যাংকের এমডি বা নির্বাহীরা আইনের বাইরে যেতে চান না। এতে ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ অন্য পরিচালকরা। একপর্যায়ে তারা দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ কারণে প্রকাশ্যে নাজেহাল হওয়ার ঘটনাও তৈরি হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পরিচালনা পর্ষদের সরকার সমর্থিত পরিচালক ও দলকানা সিবিএ’র নেতারা ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। এসব নেতার অধিকাংশই প্রায় প্রতিদিন ব্যাংকের এমডিসহ জিএম-এর রুমে বিভিন্ন তদবির নিয়ে সময় কাটান।

এর মধ্যে থাকে রাজনৈতিক জনসংযোগ, বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন, ঋণের টাকা ছাড় ও ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি প্রভৃতি। ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজকর্মও তদারকি করেন তারা। এক্ষেত্রে ব্যাংকের গাড়ি, চালক, জ্বালানি, টেলিফোন, ফ্যাক্স এমনকি ই-মেইল পর্যন্ত ব্যবহার করেন ওই নেতারা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ অনেকদিনের। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অনেকাংশে জড়িত এমন অভিযোগও রয়েছে।

এগুলো হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)।

অভিযোগ রয়েছে, এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায়। এক্ষেত্রে প্রায় সব আমলেই উপেক্ষিত হয়েছে মেধা, প্রতিভা ও যোগ্যতা। ফলে সরকারি দলের সমর্থক হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ঋণ অনুমোদন-বিতরণ ও ব্যাংকের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাব খাটিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। কেউ কেউ নিজের, কখনও পরিবারের অন্য সদস্যের, আবার কখনও আত্মীয়স্বজনের নামে নিচ্ছেন বড় অঙ্কের ঋণ।

এছাড়া বড় ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা যেহেতু পরিচালনা পর্ষদের হাতে, সেক্ষেত্রে এই বিষয়েও হস্তক্ষেপ করেন তারা। ভুয়া, অস্তিত্ববিহীন, নামসর্বস্ব ও খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নামে শত শত কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দিয়ে ব্যাংকের সম্পদ খুঁইয়ে চলেছেন সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ঘুরে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবশালী সদস্যদের অনৈতিক নির্দেশ মানতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মকর্তারা। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ পরিচালকদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধাভোগের বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়ার যেন কেউ নেই।

এদিকে সরকারি ব্যাংকে একের পর এক ঘটে যাওয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করেছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনিও চান— শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, যথাযথ মানদণ্ডে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ হোক। পর্ষদ গঠনে যথাযথ যোগ্যতা, মানদণ্ড বিবেচনায় নেওয়া হয় না বলে স্বীকার করেছেন তিনি। এরপরও সংশোধন হয় না সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের ঘটনায় বেশি সমালোচিত রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের খুশি করে হলমার্ক ও অন্য একটি গ্রুপ সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকটির সার্ভার হ্যাক করে পাচার হয়েছে আড়াই লাখ ডলার। মাটির নিচ থেকে সুড়ঙ্গ কেটে ব্যাংকের একাধিক শাখার ভল্ট থেকে চুরি হয়েছে টাকা। এছাড়া ব্যাংকটিতে বড় অঙ্কের অনেক খেলাপি ঋণ আদায় নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।

এদিকে রাষ্ট্রের সম্পদ হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বিলি-বণ্টন ও ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ— এমন অভিযোগ সর্বত্র। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান লুটেপুটে খেয়েছেন এখানকার সম্পদ। বেসিক ব্যাংকে যা ঘটেছে, তা স্রেফ ডাকাতি বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

এদিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সবসময়ই কিছু না কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন। অনেক সময় আমাদের পছন্দও ঠিক হয় না। এ কারণে অসুবিধায় পড়তে হয়।’

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জালিয়াতির জন্য পরিচালনা পর্ষদ ও সরকারের তদারকির অভাবকে দায়ী করেছেন অর্থমন্ত্রী। তার মন্তব্য— ‘অনিয়মের পেছনে পরিচালনা পর্ষদ দায়ী। এক্ষেত্রে সবাই মিলেই দোষটা মেনে নিতে হবে। কেননা আমাদের পর্যবেক্ষণ অত শক্তিশালী ছিল না।’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সরকার এখন ব্যাংকে রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে। অভিজ্ঞ ও পারদর্শীদেরই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে।’

292 ভিউ

Posted ৭:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com