শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সরকারের কড়াকড়িতে উল্টোপথে সঞ্চয়পত্র : গ্রাহকরা কেনার চেয়ে ভাঙছেন বেশি

রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩
35 ভিউ
সরকারের কড়াকড়িতে উল্টোপথে সঞ্চয়পত্র : গ্রাহকরা কেনার চেয়ে ভাঙছেন বেশি

কক্সবাংলা ডটকম :: দেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ ও আস্থার জায়গা সঞ্চয়পত্র। চাকরি থেকে অবসরের পর পাওয়া অর্থ অথবা বাড়তি টাকা হাতে থাকলেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা হতো। সেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এখন উল্টোপথে হাঁটছে। গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র কিনছেন কম, ভাঙছেন বেশি। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপের কারণেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। ফলে গ্রাহকদের দায় মেটাতে (সুদ-আসল পরিশোধ) ঋণ করতে হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরকে। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন কেউ কেউ। ফলে সঞ্চয়পত্র কেনা কমছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্র মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দিয়ে গ্রাহকের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করাও সম্ভব হয়নি।

উল্টো সরকারি কোষাগার বা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ। ব্যাংক ঋণের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে সরকারের।

সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বলতে বোঝানো হয়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও ভাঙানোর মধ্যকার ব্যবধান। অর্থাৎ আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৭৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ওই সময়ে সুদ-আসল পরিশোধের পরও সরকারের কোষাগারে ১২ হাজার ১৭৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জমা ছিল। সে সময়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয়নি। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক কমেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে পরের ৪ মাস ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়েছে এবং প্রতি মাসেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। যেমন সেপ্টেম্বরে ৭১ কোটি, অক্টোবরে ৯৬৩ কোটি, নভেম্বরে ৯৮৩ কোটি ও ডিসেম্বরে ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

যেমন; ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের মোট নতুন বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি টাকার। একই মাসে বিনিয়োগকারীরা ৭ হাজার ৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন। ভাঙানো থেকে মোট বিক্রি বাদ দেয়ার পর নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে নেতিবাচক ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকায়।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পান। কিন্তু এই বিক্রি সরকারের জন্য ঋণ। জনগণের কাছ থেকে এ ঋণ নেয়ার বিপরীতে সরকারকে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা থাকলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম ৭ মাসে এ খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার।

উল্টো সরকার পরিশোধ করেছে। অথচ এর আগে কয়েক অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এতে সরকারের সুদ ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে বিক্রি কমানোর নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। আগের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন কেউ কেউ।

এদিকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১লা জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সনদপত্র বাধ্যতামূলক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্তসহ আরও কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরপরও বিক্রি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়। এরপরই বিক্রি কমতে থাকে।

একজন গ্রাহক বলেন, ব্যাংকেও সুদ হার কম। পরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করি। এখানেও ভালো যাচ্ছিল না। এর পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছিলাম, সেটাও আর এখন হচ্ছে না। কারণ আয় কমে গেছে। ফলে সব টাকা উঠিয়ে নিতে হচ্ছে।

একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, সাধারণ মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিবেচিত হতো। কিন্তু সরকার কর্তৃক নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ কমছে মানুষের।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সুদহার কমানোসহ নানান শর্ত আরোপ করার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমা শুরু হয়েছে। বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই সরকারের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। সুদহার কমায় অবসরের অর্থ কিংবা পরিবারের বাড়তি টাকা থাকলেও সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে আসছেন না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নানা ধরনের শর্ত আরোপের কারণে মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সে কারণেই নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছে। সরকারকে কোষাগার থেকে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৮.৭৮ শতাংশ।পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেই খরচ বেড়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে।

মূল্যস্ফীতির প্রভাব সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে:

মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সরকার। বাজারে জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই বেশি। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থাৎ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) বেড়ে হয়েছে ৮.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের বাজারে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, গত মাসে সেই পণ্য বা সেবা নিতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৮.৭৮ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের এই মূল্যস্ফীতি তার আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় ০ দশমিক ২১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। এক দশকের রেকর্ড ভেঙে গত বছরের আগস্ট মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯.৮৪ শতাংশে পৌঁছায়।এরপর টানা পাঁচ মাস তা কমে জানুয়ারিতে ৮.৫৭ শতাংশে নেমে আসে।

এদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ না পাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকে সরকারের ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৩৯৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

35 ভিউ

Posted ২:০৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com