কক্সবাংলা ডটকম(৩০ নভেম্বর) :: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক আর নেই। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে শোকাহত চ্যানেল আই পরিবার।
আনিসুল হকের চিকিৎসার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নাগরিক টিভির সিইও আব্দুন নূর তুষার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।
ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেন: ‘‘আমি গভীর দু:খের সাথে সকলকে পরিবারের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি যে, ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, নন্দিত টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী, মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব আনিসুল হক, ৩০ নভেম্বর ২০১৭ লন্ডন সময় ৪:২৩ মিনিটে, বাংলাদেশ সময় রাত ১০:২৩ মিনিটে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোক গমন করেছেন। তার পাশে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী , পুত্র ও কন্যাদ্বয়। তার মরদেহ শনিবার সকাল ১১:৪০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানযোগে ঢাকায় আনা হবে।
ঢাকা সহ সারা দেশে তার সকল শুভান্যুধায়ী, গুনগ্রাহী যারা তার জন্য দোয়া করেছেন, সকল গণমাধ্যমকর্মী ও তার স্বজনদের আমরা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা দোয়া করবেন যাতে তিনি জান্নাতবাসী হন।’’
শুক্রবার বাদ জুমা লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে তার নামাজে জানাজা শেষে শনিবার বেলা ১১টা ৪০মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ঢাকায় আনা হবে। একই দিন বিকেল ৪টায় আর্মি স্টেডিয়ামে তার নামাজে জানাযা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী। শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
এর আগে মেয়র আনিসুল হকের মেয়ে কানিশা হক জানিয়েছিলেন, লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আনিসুল হককে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়।
গত ৪ আগস্ট তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। অবস্থার উন্নতি হলে ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে নেয়ার খবর জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর এক মাসের মধ্যে আবারো আইসিইউতে নেওয়া হল ৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হককে।
নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডনে যান ৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হক। তিনি সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ) আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন থেকেই লন্ডনে চিকিৎসাধীনছিলো জনপ্রিয় এ ব্যক্তিত্ব।
মেয়র আনিসুল হকের জন্ম চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায় ১৯৫২ সালে। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
কর্মজীবন
১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
রাজনৈতিক জীবন
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আনিসুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন এবং বিজয়ী হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে বহাল ছিলেন।
পরিবার
আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন বর্তমানে মোহাম্মদি গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন।
মৃত্যুবরণ
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রাত লন্ডনের স্থানীয় সময় (বিকাল ৪.২৩ মিনিট) বাংলাদেশ সময় ১০.২৩ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক রাজধানী ঢাকাকে ‘সুন্দর নগরী’তে পরিণত করার তার যে স্বপ্ন তা অপূর্ণই থেকে গেল।
২০১৫ সালে ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিএনসিসি মার্কেট চালু, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে সড়ক উন্মুক্ত করা, শ্যামলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত সড়ক পার্কিংমুক্ত ঘোষণা, ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন আনিসুল হক। এছাড়া রাজধানীর সৌন্দর্য্য বর্ধনে নিয়েছিলেন বেশকিছু উদ্যোগ।
গত বছরের শুরুতে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন তিনি যার মধ্যে রয়েছে রাজধানীকে সুন্দর করতে যানজট নিরসনে তেজগাঁওসহ ১০টি এলাকার রাস্তা দখলমুক্ত করা, ২২টি ইউলুপ নির্মাণ, ৩ হাজার বাস নামানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, সবুজায়নে ইকো বাস সার্ভিস চালু, ২০ হাজার বিলবোর্ড উচ্ছেদ ও পরিকল্পিত বিলবোর্ড স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ, সড়কে এলইডি বাতি সংযোজন, প্রধান সড়কগুলোকে রিকশামুক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন।
গত শতাব্দির আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করা আনিসুল হক ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলেন।
ব্যবসায়ী হিসেবেও আনিসুল হক ছিলেন সফল। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনিসুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন এবং বিজয়ী হন।
আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে মোহাম্মদি গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।
Posted ১২:০২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta