রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন মামলার ৮৮ শতাংশ আসামিই খালাস

বুধবার, ০৯ আগস্ট ২০১৭
735 ভিউ
হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন মামলার ৮৮ শতাংশ আসামিই খালাস

কক্সবাংলা ডটকম(৯ আগষ্ট) :: হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় গড়ে ৮৮ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ‘মামলায় সাজা ও খালাসের নথি’ থেকে গত ছয় মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে ভয়াবহ এই চিত্র পাওয়া গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নারী নির্যাতন মামলার। এ ক্ষেত্রে খালাস পায় ৯৫ শতাংশ আসামি। এ ছাড়া ধর্ষণ মামলায় ৮৮ শতাংশ, দ্রুত বিচার আইনের মামলায় ৮৭ ও হত্যা মামলার ৭৬ শতাংশ আসামি ছাড়া পেয়ে যায়।

এর পেছনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মামলার তদন্ত পর্যায়ে দুর্বলতা এবং আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে বেশি দায়ী করেছেন। সাক্ষীর অভাব এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক বাদীও মামলা নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নষ্ট হয়ে যায় আলামত। এতে সুবিধা পেয়ে যায় আসামিরা।

সর্বশেষ গত রোববার দেশ-বিদেশে আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামির মধ্যে দু’জনকে খালাস, চারজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন ও দু’জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়। দু’জন খালাস ও চারজনের দণ্ড কমায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বজিতের পরিবার। এ রায়ে আদালত সুরতহাল রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের নথির তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে মোট ৪৩ হাজার ৭০৬টি মামলার রায় ঘোষণা হয়। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৯৪৬টি মামলায় এক লাখ চার হাজার ৭৭ আসামি খালাস পেয়েছে। আট হাজার ৭৬০টি মামলায় ১৪ হাজার ১৬৫ জনের সাজা হয়েছে। এ হিসাবে ৮৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ আসামি খালাস পেয়েছে এবং

সাজা হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশের। এ সময়ে ৩১৯টি হত্যা মামলায় এক হাজার ৮৮৭ আসামি খালাস পায় এবং ২০২টি মামলায় ৫৯৫ জনের দণ্ড হয়েছে। ধর্ষণ মামলার চলতি বছর ৮৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ আসামি খালাস পেয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলায় আসামি খালাসের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ।

শিশু নির্যাতন মামলায় ৭২ শতাংশ ও দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলার ৮৭ শতাংশ খালাস পেয়েছে। চলতি বছর ঢাকায় বিচার নিষ্পন্ন মোট মামলায় ৬২ শতাংশ আসামি ছাড়া পেয়েছে। সাজা হয়েছে ৩৭ শতাংশ আসামির।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কেঁৗসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু  বলেন, অনেক সময় তদন্তের দুর্বলতা, সাক্ষীর অভাবে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। কিছু মামলায় সাক্ষীরা আদালতে উল্টাপাল্টা সাক্ষ্য দেয়। মাদক মামলার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অনেক মামলায় বছরের পর বছর সাক্ষী উপস্থিত হয় না। তবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে, যাতে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করা যায়।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, মূলত তিনটি কারণে আসামিরা খালাস পাচ্ছে। প্রথমত, মামলা নেওয়ার আগে সঠিকভাবে তদন্ত হয় না। তাই অনেক মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। এসব মামলার আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তদন্ত পর্যায়ে পুলিশের অদক্ষতা, দুর্বলতা, আর্থিক লাভ ও রাজনৈতিক চাপে মামলার ক্ষতি হয়।

তৃতীয়ত, দেশে সাক্ষীর জন্য কোনো ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তাই ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীরা হাজির হতে চায় না। তবে দেওয়ানি মামলায় সাক্ষীর অভাব হয় না। কারণ, দেওয়ানি মামলায় জিতে গেলে সাক্ষীরও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক এবং ময়নাতদন্ত ও ধর্ষণের আলামত নির্ণয়কারীদের সংগঠন দ্য মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের মহাসচিব সোহেল মাহমুদ বলেন, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলার অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই নির্ভুল প্রতিবেদন দাখিল করা ন্যায়বিচারের স্বার্থে জরুরি বিষয়।

আদালত থেকে একটি নির্দেশনাও আছে যাতে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু একজন চিকিৎসককেও প্রশিক্ষণ করানো যায়নি। তাই অনেক সময় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটির অভিযোগ ওঠে।

পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হলে অনেক সময় মামলার ‘মেরিট’ নষ্ট হয়। গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলামতও নষ্ট হয়। এ ছাড়া মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কিছু ক্ষেত্রে সাক্ষীকে নিরুৎসাহিত করে ফেলে। কেউ কেউ এখন সুবিধা নিয়ে আপসও করে ফেলেন। এমনও অভিযোগ আছে, প্রসিকিউশনের কেউ বাদী-বিবাদী দু’জনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মামলার ক্ষতি করেন।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন পুলিশ তদন্তে বস্তুগত আলামত সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক আলামতও রাখছে। সারাদেশে চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশের বিশেষ অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। থানা পুলিশও অনেক মামলার তদন্ত করে। সামগ্রিকভাবে কীভাবে তদন্তের মান বাড়ানো যায় এ নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো অপরাধ ঘটলে তা তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার নিষ্পন্ন হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি সুই-সুতার মতো। ছোট ছোট গাঁথুনি দিয়ে তা যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে হয়। মাঝপথে কোনো জায়গায় ছন্দপতন হলে ক্ষতির ছাপ পড়ে পুরো প্রক্রিয়ায়।

তদন্ত করে যেমনি চার্জশিটে অপরাধ প্রমাণের মতো তথ্য-উপাত্ত থাকতে হবে, তেমনি আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব সরকারি কেঁৗসুলিদের। আবার অনেক সময় সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে চার্জশিট ও ময়নাতদন্তের মিল থাকে না। এর ফলে আসামিপক্ষ আদালতে গিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।

অনেক সময় আলোচিত ঘটনায় আসামি খালাস পেলে জনমনে প্রশ্ন ওঠে, কেন কী কারণে তারা খালাস পেল। এটা কি তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ও সরকারি কেঁৗসুলিদের ব্যর্থতা? ঢাকার মালিবাগে ১৭ বছর আগে বুশরা হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়ে নিম্ন আদালতের দণ্ডিত চার আসামির সবাইকে ২০১৬ সালে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

২০০৩ সালে এ মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। চলতি জানুয়ারিতে নেত্রকোনার হাটনাইয়া গ্রামের কৃষক কায়েস চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন ও ২৬ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

গুলশানে কামরুল হত্যা মামলার রায়ে ঢাকার ওই সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ, আহসানুজ্জামান ওরফে প্যারিস, জাহিদুল ইসলাম ওরফে মানিক ও বগা লিটনকে খালাস দেন আদালত। ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ওই রায়ের পর্যালোচনায় বলা হয়, ‘এ হত্যার প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষী নেই। প্রত্যক্ষদর্শী দুই সাক্ষী হাজির করতে বারবার পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের হাজির করতে পারেনি। তাই আসামিদের খালাস দেওয়া হলো।’

অধিকাংশ মামলায় আসামির খালাসের কারণ হিসেবে তদন্ত ও রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়।

মাদক মামলায় সাজার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি :পরিসংখ্যান বলছে, অন্যান্য মামলার তুলনায় মাদক মামলার সাজার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ২০১৭ সালের ছয় মাসে চার হাজার ৫২টি মাদক মামলায় পাঁচ হাজার ৪৬৩ জন খালাস পেয়েছে। এ সময়ে তিন হাজার ৮২ মামলায় তিন হাজার ৬৯০ জনের সাজা হয়েছে। এ হিসাবে মাদক মামলায় সাজা হয়েছে ৫৯ শতাংশ আসামির। ২০১৬ সালে নয় হাজার ৩১ মামলায় ১১ হাজার ৬৪৪ জন খালাস পেয়েছে। এ সময়ে পাঁচ হাজার ১৮৯ মামলায় ছয় হাজার ৪৫৯ জনের দণ্ড হয়েছে। এ বছর মাদক মামলায় সাজা হয়েছে ৬৪ শতাংশ আসামির।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে মোট মাদক মামলার আসামির ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ খালাস পেয়েছে। ২০১৪ সালে ৪৮ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৪৬, ২০১২ সালে ৪৭ ও ২০১১ সালে ৬১ শতাংশের সাজা হয়।

735 ভিউ

Posted ২:০৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৯ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com