আব্দুল কুদ্দুস রানা
১২ জুন শুক্রবার ভোররাত তিনটা। প্রচন্ড ক্ষুধার তাড়নায় কাতর ৪০ বছর বয়সি এই বন্যহাতি। বাঁচার জন্য খাদ্য চাই। খাবারের সন্ধানে হাতির পথ চলা শুরু। অন্ধকার রাতে হাঁটতে হাঁটতে হাতিটি পৌছে গেল টেকনাফের নীলা ইউনিয়নের পানখালীর মরিচ্যাঘোনা এলাকায়। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠে ২৭টি পরিবারের বসতি। বসতি আলোকিত করার জন্য টানা হয়েছিল অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ লাইন।
আর সেই বিদ্যুৎ লাইনে জড়িয়ে প্রাণ হারাল অভুক্ত হাতিটি। আড়াই বছরের বন্দিজীবনে থেকেও বাঁচার স্বপ্ন পুরণ হলোনা হাতিটির। দূর থেকে এই করুন দৃশ্য দেখে-অন্য হাতিগুলোও হয়তো ভাবছে ; তাদেরও একদিন এই পরিণতিই হবে। স্বাভাবিক মৃত্যু তাদের ভাগ্যে নাই।
হাতির যে আবাসস্থল, সেটা আমরা অনেক আগেই নষ্ট করে দিয়েছি। ৬ হাজার একরের বনাঞ্চল উজাড় করে, হাতি চলাচলের ২৩টি পথ বন্ধ করে , শতাধিক পানির উৎস লেক, ঝরনা-জলাশয় ভরাট করে তৈরি করেছি সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার ৩৪টি বসতি কিংবা ক্যাম্প । হাতিগুলোকে প্রাণে বাঁচানোর কিছুই রাখলাম না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো তৈরির কারণে উখিয়া-টেকনাফে আটকে আছে ৬৭টি বন্যহাতি। রোহিঙ্গা শিবির অতিক্রমণ করে হাতিগুলো রামু, কক্সবাজার, চকরিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ের দিকে যেতে পারছেনা সেই কখন থেকে। ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে হাতিগুলোর চলছে আড়াই বছরের বন্দিজীবন । না খেয়েই অপুষ্টিতে ভুগছে হাতিগুলো। হাতিগুলো নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছেনা।
মানুষ নিজের চাহিদা পুরণের জন্য হাতির আবাসস্থল-গাছপালা উজাড় করছে। হাতির দল খাদ্যের সন্ধানে নেমে পড়ছে লোকালয়ে। নষ্ট করছে মানুষের ক্ষেতের ধান-ফসল। ভাংছে মানুষের ঘরবাড়ি। মানুষ আর হাতির দ্বন্ধ বেড়েই চলেছে। এই কয় বছরে আটটির বেশি হাতির মৃত্যু হয়েছে। হাতির আক্রমণে মারা গেছে ১৩ রোহিঙ্গাসহ অন্তত ২৩ জন। হাতি আর মানুষের দ্বন্ধ কবে শেষ হবে কেউ জানেনা।
অদৃশ্য করোনা মহামারিতে মানুষের খাদ্য সংকট নানাভাবে মোকাবিলা হচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে বেওয়ারিশ কুকুর, বেড়াল এবং পশুপাখির জন্যও মানুষের বিবেক জাগ্রত দেখা যায়। কিন্তু বিলুপ্ত প্রজাতির, উপকারি ও অসহায় হাতিগুলোর জন্য কারো দরদ নেই। হাতির প্রতি মানুষের এ কেমন আচরণ ?
# হাসি সবসময় সুখের কারণ বুঝায় না,
মাঝেমাঝে এটাও বুঝায় যে,
আপনি কতটা বেদনা লুকাতে পারেন।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও অফিস প্রধান দৈনিক প্রথম আলো,কক্সবাজার
Posted ২:২৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৩ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta