কক্সবাংলা ডটকম(১৪ নভেম্বর) :: হিটলারের সাথে ইহুদীর বন্ধুত্ব! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যিনি ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করেছেন তার সাথে কোন ইহুদীর বন্ধুত্ব হতে পারে এমনটা ভাবাই যায় না। তবে এমনটি আসলেই হয়েছিল। রোসা বার্নাইল নিনাউ নামের এক ছোট্ট ইহুদী মেয়ের সাথে বন্ধুর সর্ম্পক পাতিয়েছিলেন হিটলার। পাঁচ বছর টিকেওছিল এ বন্ধুত্ব। পরে সরকারি কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তা ছিন্ন হয়।
হিটলার আর রোসার একটি দুর্লভ ছবি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের আলেকজান্ডার হিস্টরিকাল অকশন হাউজে নিলামে ওঠে। ছবিটি ১১ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে।
বন্ধুত্বের শুরুটি হয়েছিল জন্মদিনকে কেন্দ্র করে। হিটলার আর রোসার জন্মতারিখ ছিল একই, ২০ এপ্রিল। ১৯৩৩ সালে হিটলার জন্মদিন উদযাপনের জন্য বাভারিয়ান আল্পসের পাবর্ত্য অঞ্চলে তার বাসস্থান বার্গহফে আসেন। সেখানে জামার্ন জনগণও তাদের নেতার জন্মদিন উৎসবে শামিল হয়। তার মধ্যে রোসা আর তার মাও ছিল। একই জন্মদিন হওয়ার কারণে হিটলার রোসাকে তার বাসভবনে ডেকে নেন। সেসময় রোসার বয়স ছিল ছয়। তখন তাদের বেশ কিছু ছবি তোলা হয়। এগুলো তুলেছেন হিটলারের ব্যক্তিগত চিত্রগ্রাহক হেইনরিখ হফম্যান।
নিলামে তোলা ছবিটিতে হিটলার ও রোসাকে বেশ হাস্যজ্জল অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ছবিটির একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি হিটলারের সই করা। গাঢ় নীল রঙয়ের কালিতে ছবিটির ওপর জার্মান ভাষায় হিটলার লেখেন, “প্রিয় এবং [সহানুভূতিশীল?] রোসা নিনাউ অ্যাডলফ হিটলার মিউনিখ,১৬ জুন ১৯৩৩”। পরে ছবিতে রোসা তার নিজের চিহ্ন হিসেবে এডেলউইস ও ক্লোভার ফুলের ছবি যুক্ত করে।
১৯৩৩ সালেও হিটলার তার বিধ্বংসী রূপ পরিগ্রহ করেননি। তখন বিশ্বের মানুষের কাছে তাকে একজন দয়ালু নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করত তার প্রোপাগান্ডা বাহিনী। এজন্য অনেকসময় তাকে বাচ্চাদের সাথে ছবি তুলতে দেখা যেত। তবে রোসা আর হিটলারের সর্ম্পক বেশ গভীর ছিল বলেই জানাচ্ছেন হেইনরিখ হফম্যান।
তিনি বলেন, এই মেয়েটির সাথে হিটলারের সত্যিকারের বন্ধুত্ব ছিল। রোসা তাকে ডাকত হিটলার আংকেল বলে। সে ‘ফুয়েরারের সন্তান’ হিসেবে পরিচিত ছিল। সে ছিল হিটলারের খুব প্রিয়। সে ছিল হিটলারের সুইটহার্ট। তাদের মধ্যে চিঠির আদান প্রদান হত। হিটলারের সাথে সর্ম্পক ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৮ এর মধ্যে রোসা কমপক্ষে ১৭ বার হিটলার ও তার সহকারী উইলহেলম ব্রুকনারকে চিঠি লেখে।
তাদের মধ্যে সর্ম্পক থেমে যায় রোসার ইহুদী পরিচয় জানার পর। মূলত রোসার দাদি ছিল ইহুদী। তখনকার জার্মানীর নিয়মানুসারে বংশে কেউ ইহুদী থাকলেই সে ইহুদী বলে গণ্য হত। তাই হিটলারের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি মার্টিন বরম্যান রোসা আর তার মাকে এ সর্ম্পক শেষ করার জন্য বলেন। বিষয়টি হিটলার জানতেন না। রোসাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে জানতে পেরে রেগে যান তিনি। হফম্যানকে তিনি বলেছিলেন, আমার প্রতিটি আনন্দ নষ্ট করার মত প্রতিভাবান কিছু লোক সব জায়গাতেই আছে।
এর কিছু দিনপরই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইহুদীদের ওপর নেমে আসে হলোকাস্ট নামক বিভীষিকা। এতে ইউরোপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইহুদী নিহত হয়। রোসা অবশ্য যুদ্ধে মারা যায় নি। সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৩ সালে মিউনিখের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।
Posted ৭:৫৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta