কক্সবাংলা ডটকম(১ জানুয়ারী) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ।নতুন বছরের প্রথম থেকেই এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বে মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ গুছিয়ে আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে সাফল্য আনতে চায় বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সর্বাত্মক প্রস্তুতিই এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য। নেতারা আভাস দিচ্ছেন, সতর্কতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগোবে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের মহাপরিকল্পনা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, পরিকল্পনাটি দ্রুতই প্রস্তাব আকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি অনুমোদন দিলে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। এ পরিকল্পনায় কী থাকছে, সে সম্পর্কে এখনই কিছু জানাতে চাইছেন না সংশ্নিষ্ট নেতারা।
তবে তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকেই পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগেই দলকে নির্বাচন উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে এ মহাপরিকল্পনায়। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নতুন বছরের শুরু থেকেই সারাদেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেবেন। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা জানবেন। সেই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করবেন। সব মিলিয়ে নতুন বছরের শুরু থেকেই নেতারা দেশজুড়ে নির্বাচনী আবহ তৈরি করবেন।
পরবর্তী সময়ে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটিই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের উদ্যোগও থাকবে। দেশজুড়ে পোলিং এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার উদ্যোগও থাকবে মহাপরিকল্পনাতে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলে বিভিন্ন খাত ও দিকের মধ্যে তুলনা করে পোস্টার প্রকাশনারও চিন্তা রয়েছে।
এদিকে নতুন বছরে সীমিত আকারে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় জনসংযোগে যাবেন বলে নেতারা জানিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনকেন্দ্রিক অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সরকারবিরোধী সম্ভাব্য আন্দোলন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করে তুলবেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানান, নতুন বছরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সফরে যাবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও জনগণের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে যেসব জেলা এবং উপজেলায় যাননি, তার সফরের তালিকায় সেই সব জেলা ও উপজেলা প্রাধান্য পাবে।
কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, গত ২৩ ডিসেম্বর দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে জেলা এবং উপজেলা সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি তার সম্ভাব্য সফরের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবেন। এর মধ্য দিয়ে নতুন বছরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতায় ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সাধারণত জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ভাষণ দেন। নতুন বছরে তিনি জনসভার পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করবেন। স্থানীয় নেতাদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেবেন।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও উপজেলায় জনসংযোগ করবেন। জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে ধারাবাহিক এ কর্মসূচি। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সভাপতিমণ্ডলীর ১৫ সদস্যের নেতৃত্বে কমপক্ষে ১৫টি গ্রুপ তৃণমূল পর্যায়ে জনসংযোগে অংশ নেবে। মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরবেন। পাশাপাশি কথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিষয়টিও আলোচনার পুরোভাগে নিয়ে আসবেন।
নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরিপ করেছেন। ওই জরিপ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রায় প্রতিটি আসনেই এমপিদের সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের বিরোধের চিত্র বড় ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ অবস্থায় অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িত নেতাদের ঢাকায় এনে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের দ্বন্দ্ব-বিবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এক ধরনের উদ্বেগে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত বিজয় যাতে কোন্দলের কারণে হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে তিনি ইতিমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে কেউ যাতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি থাকলে ষড়যন্ত্র ঢুকতে পারে। তাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই কিছু করতে পারবে না।
এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ও কাজকর্ম এখনও শুরু না হলেও ভেতরে ভেতরে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা মোটামুটি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। গোপনে অনেককেই মনোনয়ন বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরে গিয়ে দলকে আরও গণমুখী করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের মীমাংসা করবেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কে কোথায় যাবেন, তার তালিকা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর নেতারা নির্দিষ্ট জেলা ও উপজেলা সফরে যাবেন। এর আগে আগামী ৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করা হবে। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে দলীয় নির্দেশনা পাঠিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এবং ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ গুলশানে জনসভা করবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম শেষের দিকে। একটি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসামি। আলোচিত এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। সেটা হলে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সাংগঠনিক সফরে ব্যাপক প্রচার চালাবেন নেতারা। একই সঙ্গে তারা ওই মামলার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা বিষয়েও তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
এ ছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের যে কোনো ধরনের সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র বিষয়ে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার নির্দেশ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতিমধ্যে নানাভাবে ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নেতারা মনে করছেন। বিশেষ করে হঠাৎ বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে সাফল্য আনতে চায় বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সর্বাত্মক প্রস্তুতিই এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য। নেতারা আভাস দিচ্ছেন, সতর্কতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগোবে বিএনপি।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তথা সব প্রতিদ্বন্দ্বীর সমান সুযোগের নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি না হলে আবারও নির্বাচন বর্জন করে প্রতিহত করার চেষ্টাও করবে তারা। যদিও ২০১৩-১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলটি তাতে ব্যর্থ হয়েছিল। এখন দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ওই সময়ের চেয়েও বেশি।
শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মোকাবেলায় পর্যুদস্ত। তবে দলের জনসমর্থন রয়েছে বলে নেতারা আস্থা প্রকাশ করেন। তাই আবারও কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন বছরে নানা কৌশলী পরিকল্পনা নিয়ে এগোবেন তারা।
দলের নীতিনির্ধারক নেতারা বলছেন, এবার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাদের লড়তে হবে। অন্য কোনো বিকল্প নেই। দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। নির্বাচনে অংশ না নিলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কাও রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৮ সাল হলো বিএনপির। এ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করাই বড় চ্যালেঞ্জ। তারা আশাবাদী, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জে সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে’ অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের জন্য যা যা করার বিএনপি তার সবই করবে। কোনোভাবেই এবার আর একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক সেটাই চান। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যাতে যে কোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে না পারে সেজন্য নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়া বা বানচালের কোনো সুযোগ তৈরি হতে দিতে চায় না বিএনপি। কিন্তু তাদের সমর্থক জনগণকে তারা সক্রিয় করতে চায়। নতুন বছরের প্রথম ছয় মাস ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করবে তারা। দাবি পূরণে সরকারের গতিবিধি দেখে বছরের শেষ ছয় মাসেই আন্দোলনের কর্মসূচিসহ হার্ডলাইনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
২০১৮ সালের শেষে হতে পারে সংসদ নির্বাচন। আজ থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনী বছরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। সময় ও সুযোগ বুঝে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। এর আগে দেওয়া ‘ভিশন-২০৩০’-এর আলোকেই ইশতেহার তৈরি হচ্ছে, যাতে বেশ কিছু চমক থাকবে। যোগ্য প্রার্থী দেওয়ার জন্য একাধিক জরিপ পরিচালনা করছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ২০১৮ সালে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তারা গণতন্ত্র ফিরে আনার জন্য দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করবেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন। বছরটিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। নির্বাচনকালীন সরকার নিশ্চিত হতে হবে। তারা আশা করেন, সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিলে এ ব্যাপারে সংলাপ ও সমঝোতায় আসবেন।
দলের নেতারা জানান, ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জনের মতো আর ভুল করতে চাইবে না বিএনপি। যে কোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করবে তারা। ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিকল্পনা থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করা নিয়ে প্রস্তাব পেশ, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটি যোগদান করেছে। ইতিমধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। যদিও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে রেখে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে। তবে শেষ মুহূর্তে কিছুটা ছাড় দিয়েই নির্বাচনে যেতে পারে দলটি।
নতুন বছরের প্রথম ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করা হবে বলে জানান নেতারা। শিগগির জেলা ও উপজেলা, ইউনিয়নসহ সব অসমাপ্ত কমিটিগুলো পুনর্গঠন কাজ সমাপ্ত করা হবে। তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজানসহ সাংগঠনিক সম্পাদকের দ্রুত পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন বানচাল হওয়ার আশঙ্কায় সংঘাতপূর্ণ কর্মসূচি এড়িয়ে ইতিবাচক রাজনীতি করার কৌশল গ্রহণ করবে সংসদের বাইরে থাকা দলটি। এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হলেও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, যাতে কেউ ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করার সুযোগ না পায়। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হলে বিএনপি জিতবে। তাই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও করছেন দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপির শীর্ষনেতারা জানান, নিকট অতীতের অভিজ্ঞতায় ভুল করা সম্পর্কে তারা সতর্ক। নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে এখনই আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে মামলা-হামলা ও গুমের মাধ্যমে লোকবলের ক্ষতির আশঙ্কা এড়াতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হবে নির্বাচন আরও ঘনিয়ে এলে।
জানা যায়, আগামী ৫ জানুয়ারি সরকারের চার বছর পূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ জমায়েত করতে চায় বিএনপি। এরপর বছরের প্রথম দিকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় রায় হলেও কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে চাইবে দলটি। একসঙ্গে ছয় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঠ সরব রাখতে চায় তারা। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও কিছু দিনের মধ্যে বিভাগীয় সফরে যাবেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা সফর শুরু করেছেন।
অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন দুর্নীতর মামলা দুটির রায়ের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। পাশাপাশি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যেতে পারেন। দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে দল ও জোট ভেঙে নির্দলীয় সরকার ছাড়াই দলের একাংশকে নির্বাচনে টেনে নেওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, নতুন বছরে দেশের জনগণের আর বিএনপির পরিকল্পনা একই। সময় বলে দেবে কখন তারা কী সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি দেবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিএনপি জনগণের ওপর নির্ভরশীল একটি দল। যা করার জনগণকে নিয়েই করবে। সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনে বিএনপি কী করবে।
Posted ১:৩২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta