কক্সবাংলা ডটকম(৪ জুন) :: আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে থাকছে না নতুন কিছুই। নির্বাচনের বছর হওয়ায় কোন কিছুতেই আমুল পরিবর্তন না করে আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে। চলতি বছরে বাস্তবায়ন না হলেও যথারীতি আকার বাড়ানো হচ্ছে। আকার বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় কিছু খাতে বরাদ্দ বাড়াতে গিয়ে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার মত ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজস্ব আদায় কম হওয়া এবং ব্যাংক—আর্থিক খাতের দুরবস্থার কারণে বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তা নির্ভর প্রাক্কলন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের করুণ দশায় এখাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ সম্ভব না হতে পারে ভেবে বিদেশি উত্স থেকে অর্থ সংগ্রহে বিশেষ গুরুত্ব থাকছে নতুন বাজেটে। সবমিলিয়ে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
চলতি অর্থবছরে সরকার বেশি ঋণ নিয়েছে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উত্স থেকে। এতে পুরো আর্থিক খাতের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়েছে। তাই আগামীতে এ ধরনের চাপ কমাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বৈদেশিক সহায়তার ওপর।
এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান বাড়ানো ও দারিদ্র্যের হার কমাতে প্রবৃদ্ধির হারও বাড়ানোর ঘোষণা থাকছে। এবারের বাজেটে নতুন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত চ্যালেঞ্জ খাত যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গা।
অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দের নতুন খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন। এ খাতে ৪শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
ব্যাংক ব্যবসায় আস্থা ফেরাতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেট বক্তৃতায় একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের রূপরেখা দেয়া হবে। সেই সাথে একটি সার্বজনীন পেনশন স্কীমের রূপরেখা দেওয়ার বিষয়ও থাকছে। অপরিবর্তিত থাকছে কর্পোরেট কর হার। সিগারেটের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়বে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ছে। প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণাও থাকছে নতুন বাজেটে। ভ্যাটের স্তর কমিয়ে ৫টিতে আনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এটি তিন স্তরে নিয়ে আসা হবে। তবে সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশই থাকছে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ঘাটতি ধরে আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ঠিক করা হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বড় অঙ্কের ব্যয়ের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ বাজেটে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআর করের লক্ষ্য রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত খাত হতে রাজস্ব আদায় ১১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা এবং কর ছাড়া অন্যান্য আয়ের খাত থেকে ৩৩ হাজার ১১২ কোটি টাকা যোগানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে বলে জান যায়।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। এই খাতে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ ২৭ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই বরাদ্দ ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বেড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় বিগত কয়েক অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানি খাতে ভর্তূকি দিতে হয়নি। বরং চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে যাতে করে নতুন অর্থবছরে এই খাতে চাপ বাড়তে পারে।
তাছাড়া প্রকৃত দামের চেয়ে কম দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রি করতে হবে বলে নতুন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে কৃষকদের সুবিধা দিতে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। বেশি সংখ্যক মানুষকে সুবিধা দিতে বিস্তৃত করা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী। সেই সঙ্গে ভাতাও বাড়বে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য সুবিধাভোগীদের সংখ্যাও। আসন্ন বাজেটে সরকারের ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির বা ইনক্রিমেন্টের ঘো
ষণা আসতে পারে। সার্বিকভাবে আগামী বাজেটে ঘাটতির আকার মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এর সম্ভাব্য পরিমাণ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ঐ হিসাবে আগামীতে ঘাটতির পরিমাণ বেশি দাঁড়াচ্ছে ১৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
নতুন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য হতে পারে ৫৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া বৈদেশিক উত্স থেকে ৩৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আসছে বছর বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে সরকারকে ব্যয় করতে হবে ১৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এছাড়া সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অবশ্য এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ১৬ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা কম।
\
Posted ৩:০২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta