কক্সবাংলা ডটকম(৭ আগস্ট) :: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর সেবা রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮৫০ কোটি ডলারের। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম রফতানির এ লক্ষ্য ঘোষণা করেন।
সবচেয়ে বড় রফতানি খাত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করেই রফতানির এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত খাতভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রায় দেখা যায়, ৪ হজার ৫৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি লক্ষ্যের ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলারই হবে তৈরি পোশাক খাতের নিট ও ওভেন পণ্য রফতানির মাধ্যমে, যা মোট পণ্য রফতানির ৮৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছর রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর মধ্যে নিট পণ্য রফতানি লক্ষ্য ধরা হয় ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে ১২ দশমিক ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ওভেন পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার।
এদিকে পোশাকপণ্যে ভর করে রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তা তৈরি পোশাকের বর্তমান বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক এ বিষয়ে বলেন, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর আমদানি এখন ২ দশমিক ৫ শতাংশ থাকলেও আগামী দুই বছরে ১ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসার প্রক্ষেপণ রয়েছে। সে কারণে পোশাকপণ্য রফতানির লক্ষ্য বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে রফতানিতে ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনযোগ্য বলে মনে করেন তিনি।
মূল্য সংযোজন ও পণ্যের বৈচিত্র্য নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। তুলাজাত পোশাক উৎপাদনের স্বাভাবিক প্রবণতায় এখন ক্ষান্ত দিতে হবে। বৈশ্বিক প্রবণতা এখন ম্যান মেড ফাইবার (এমএমএফ) বা কৃত্রিম আঁশের। অর্থাৎ অর্থপূর্ণ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমাদের এমএমএফ-ভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে আসতে হবে।
ব্যবসায়ীরা রফতানি লক্ষ্যকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে না করলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, বৈশ্বিক চাহিদার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়েই রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে নির্ধারিত লক্ষ্য সম্পূর্ণভাবে সংগতিপূর্ণ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) তপন কান্তি ঘোষ বলেন, লক্ষ্য নির্ধারণে আমরা বৈশ্বিক চাহিদার প্রবণতা বিবেচনায় নিয়েছি। এক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকসহ বিভিন্ন উৎসের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে কৃষিজ পণ্যে। চলতি অর্থবছর শেষে ১১২ কোটি ডলারের কৃষিজ পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি হবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর শেষে এ খাতে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির আশা করছে সরকার। এছাড়া ৮৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল ও ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, তা কঠিন কিছু না। রফতানিকারকরা আন্তরিক হলে অতি সহজেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের রফতানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত অর্থবছর তৈরি পোশাক খাতে ১১ দশমিক ৪৯, কৃষিপণ্যে ৩৪ দশমিক ৯২, প্লাস্টিক পণ্যে ২১ দশমিক ৬৫ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রফতানিতে ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পণ্য রফতানিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর শেষে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সেবা খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪৬ দশমিক ৮৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হয়। এর মধ্যে পণ্য রফতানিতে ৩৯ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত রফতানি
হয়েছে ৪০ দশমিক ৫৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে গত বছর সেবা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি ছিল।
গতকাল রফতানি লক্ষ্য ঘোষণার সময় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। ঘোষিত লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘোষিত লক্ষ্য বড় বিশাল কিছু না, এটা অর্জনযোগ্য। তবে এক্ষেত্রে রফতানি সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বস্ত্র খাতে সহায়তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াকার চৌধুরীও বলেন, রফতানি লক্ষ্য অর্জনযোগ্য, কিন্তু আমাদের রফতানি খাত পোশাক শিল্পনির্ভর। রফতানি খাতকে টেকসই করতে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
Posted ৩:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta