কক্সবাংলা ডটকম(১ জুন) :: জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের ৪৬তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একাদশতম বাজেট প্রস্তাব এটি।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বেলা দেড়টা থেকে টানা নবমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা থেকে ২৬ শতাংশ বেশি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) এ অর্থবছর ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগও।
বরাবরের মতোই এবারের বাজেটেও অনুন্নয়ন ব্যয়ের অংকটা অনেক বড়। বেতন-ভাতা, ভর্তুকি, ঋণ পরিশোধসহ এ খাতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যয় কাঠামোর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর পর বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে বেশি ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ঋণ পরিশোধ ও ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি আগের মতো থাকলেও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এবার এডিপির আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৫২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ীসহ বড় কয়েকটি প্রকল্পের জন্য বড় অংকের বরাদ্দ থাকছে।
বাজেটের আয়-ব্যয়ের পরিসংখ্যানের চেয়েও এবার বড় হয়ে উঠেছে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি। নানা জটিলতার কারণে এবার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের দিকেই নজর সবার। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে অর্থমন্ত্রী ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত ওই হারই বহাল থাকছে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ হারেই ভ্যাট হার রাখার প্রস্তাব করেছেন। তবে এবার বাড়ছে অব্যাহতির আওতা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর বর্তমানে এক ও অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে। এটি হবে ১৫ শতাংশ। এই হার আগামী ৩ বছর অপরিবর্তিত থাকবে।’
তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভারের পরিমাণ গড়ে সাড়ে ১২ লাখ টাকার কম তারা ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ পাবেন। নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সুপারিশ অনুযায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। ১৯৯১ সালের আইনে এ ধরনের কোনও সুযোগ ব্যবসায়ীরা পেতো না।
ভ্যাট অব্যাহতি পাওয়া আগের ‘এইচএস কোড’ ভুক্ত ৫৩৬ পণ্য ও সেবার পরিবর্তে ১ হাজার ৪৩টি পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনিসহ ৫৪৯টি পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেন। এছাড়া ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ওপর ও গণপরিবহন সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপরও ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেন। কৃষি গবাদি পশু ও মৎস চাষ খাত সংশ্লিষ্ট ৪০৪টি ক্ষেত্রে এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবার ক্ষেত্রেও ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেকাংশে কিছুটা কমবে। কোনও অবস্থাতেই কোনও পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এক বছর পিছিয়ে দেয় সরকার। ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই ১৫ শতাংশ ভ্যাটে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। অর্থমন্ত্রী ১৫ শতাংশে অনড় থাকার কথা জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে অর্থমন্ত্রী তার অবস্থান থেকে খানিকটা সরে আসলেও বাজেটের আগ মুহূর্তে তিনি ভ্যাট হার ১৫ শতাংশেই অনড় থাকেন।
যদিও দেশের ব্যবসায়ীরা ভ্যাট হার ১০ শতাংশের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে অন্যান্য দেশের মতো ভ্যাটের হারে বহুস্তর রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এদিকে বছর জুড়ে আলোচনা-তর্ক- বিতর্কের পর ভ্যাট হার ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদের এই বাজেটের বিষয়টি তুলে ধরবেন।
এদিকে, ভ্যাট হার ১২ শতাংশে নামানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, একবারে না হলেও ধাপে ধাপে ভ্যাট কমিয়ে আনা যেতে পারে। নতুবা এই নতুন ভ্যাট আইন উৎপাদক ও ভোক্তার ওপর চাপ বাড়াবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদও মনে করেন, নতুন আইন কার্যকর হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। চাপ বাড়বে ভোক্তার ওপর।
Posted ৪:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta