কক্সবাংলা ডটকম(৬ ডিসেম্বর) :: আজ থেকে ঠিক একমাস পরেই আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাই যাছাই হয়েছে। এখন যারা বাতিল করেছেন তারা আপিল করছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্রদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে চলছে সমঝোতার চেষ্টা। কিন্তু জয় পরাজয় বা আসন সমঝোতা বড় কথা নয়। আগামী নির্বাচনে যেসব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে কিভাবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করা হবে সেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন মোকাবিলা; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান; নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বড় অংশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন এড়ানো; ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো; ভোটের হার বৃদ্ধি; বিদ্রোহী প্রার্থী দমন, শরিক ও নির্বাচনমুখী দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা; সহিংসতা মুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি; সবার জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং অনিয়ম ঠেকানোসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যে চ্যালেঞ্জগুলো এই নির্বাচনকে মোকাবিলা করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে;
আসন সমঝোতা
নির্বাচনে আসন সমঝোতা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের আদর্শিক জোট ১৪ দল, নির্বাচনী জোটের শরিক জাতীয় পার্টি(জাপা) ও নতুন করে নির্বাচনে আগ্রহী ছোট ছোট দলগুলোকে আসন ছাড় দিতে গিয়ে খানিকটা চাপে পড়তে হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের শরিকদের প্রায় সকলেই এবার অতীতের চেয়ে বেশি সিট দাবি করছে। আবার নতুন নতুন দলগুলোর সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে গিয়েও সরকারি দলকে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। এতে করে দলের প্রভাবশালী অনেক সংসদ সদস্য ঝুঁকিতে পাড়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ:
বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ না করলেও অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এখন দেখার বিষয় যে, ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত কতগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাঠে থাকে এবং এই থাকাটা আগামী নির্বাচনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ শেষ পর্যন্ত যত স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকুক, জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন থেকে সরে যায় তাহলে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আর এই কারণেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে গেছে এবং যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকলেই নির্বাচন চ্যালেঞ্জে জয়ী হবে।
কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি:
এই নির্বাচনে বিএনপি-জামাত সহ বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করছে না। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। আর এ কারণেই এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দল মুখোমুখি দাঁড়ালেই ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায়। কিন্তু একটি দলের উপস্থিতিতে ভোটাররা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কারণ তারা মনে করে যে এই নির্বাচনের ফলাফল অবধারিত। তবে এবার নির্বাচনে একটা ভিন্ন ধরনের আকর্ষণ তৈরি করা হয়েছে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য। এখানে প্রচুর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন পন্থীরা আশা করছেন, এর ফলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। এখন দেখার বিষয় যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফমুর্লায় শেষপর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়ে কি না।
আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা:
এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল যে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা। সাধারণ মানুষ কি করল? নির্বাচন মন্দের ভাল হিসেবে মেনে নিল কিনা তার চেয়ে মুখ্য হল এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কি চোখে দেখছে সেটি হল এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচন যতটা না জন রায়ের বিষয় তার চেয়ে বড় বিষয় হল আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য। তাই এই নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা:
এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না সেটি পশ্চিমা বিশ্ব এবং জনগণ দেখবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ ভাবে দায়িত্ব পালন করেছে সে দিকেও নজর থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবারের নির্বাচনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছে, নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন। আবার অনেকেই মনে করছেন যে, নির্বাচন কমিশন আসলে বলিষ্ঠ ভাবে সবকিছু মোকাবেলা করতে পারছে না। নির্বাচনের প্রচারণা যখন শুরু হবে তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা অন্য দলের প্রার্থীদের মধ্যে যে বিরোধগুলো হবে, সেই বিরোধে নির্বাচন কমিশন কতটুকু পক্ষপাতহীন, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশন কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়, তার ওপর নির্ভর করছে কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং এই নির্বাচনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশাসন ও পুলিশের নিরপেক্ষতা:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এই নির্বাচনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৪ এবং ’১৮ নির্বাচনে এই বিষয়টি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং সেই সময় প্রশাসনের পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছিল। অনেক আসনেই প্রশাসন তাদের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল এমন কথা এখন পর্যন্ত উচ্চারিত হয়। এই কারণেই নির্বাচনে প্রশাসন এবং পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি
নিকট অতীতের নির্বাচনি অভিজ্ঞতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও আওয়ামী লীগ ও আয়োজন সংস্থা নির্বাচন কমিশনের মধ্যে বেশ আগে থেকেই সংশয় তৈরি হয়েছে। অবশ্য সর্বশেষ পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ইসি দৃঢ় আশাবাদী বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। সরকারি দল এ ব্যাপারে তাদের শতভাগ আশ্বাস দিয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে।
সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাটা ইসির জন্য কিছুটা হলে কঠিন হবে বলে ধারণা খোদ ইসিরই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এ বিষয়ে বারবার বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমুলক হলে তাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। সবাই নির্বাচনে মাঠে থাকলে মাঠ লেভেল প্লেয়িং হয়। এখানে প্রার্থী ও তার পোলিং এজেন্টারাই অনিয়ম প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
Posted ৯:০০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta