মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম
(১১ মে) :: মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম COVID-19 (Corona Virus Disease) এর রোগী চিহ্নিত হয় ৩জন। এরপর এপ্রিলের ৮ তারিখে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২১৮। এর এক মাস পর ,মানে এই মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৬৫৭। তাহলে গত এক মাসে COVID-19 আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৬ গুণ।
কক্সবাজারে প্রথম COVID-19 এর রোগী সনাক্ত হয় ২৫ মার্চ। আর বর্তমানে মোট সনাক্ত হয়েছে ৯৮ জন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আইইডিসিআর এর যে ল্যাব আছে তার টেস্টিং ক্যাপাসিটি ৯৬ এবং বর্তমানে দুই স্লটে এই টেস্ট করা হচ্ছে। কক্সবাজারের জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষ, সেক্ষেত্রে প্রতিদিন দুই স্লটে যদি ১৯২ টেস্টও করা হয়, তাহলে তা হল মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.০০৬৪ শতাংশ, যা নামমাত্রের চাইতেও কম।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে করোনা RT-PCR টেস্ট শুরু হবার পর থেকে গত ২২ দিনে মোট টেস্টের সংখ্যা ২৩৪০ ( দৈনিক গড়ে ১০৫-১১০ টেস্ট) এবং তার বিপরীতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৭ জন। হিসাব অনুযায়ী টেস্টের ৪.১৫% রোগী পজিটিভ, যা গত ৭-১০ দিনে দ্রুত বাড়তে থাকে। এখান থেকেই বুঝা যায় যদি টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো যেতো তাহলে আর অনেক পজিটিভ কেস পাওয়া যেতো, যেগুলো এখন unreported থেকে যাচ্ছে এবং এসব কেস সুপার স্প্রেডার হিসেবে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিজের অজান্তেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
আমাদের আরও একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, করোনা আক্রান্ত রোগীর ২৫% ই কোন প্রকার রোগের লক্ষণ ছাড়াই আমাদের আশেপাশে থাকতে পারে। তাই শারীরিক দূরত্ব আর ঘরে থাকার কোন বিকল্প নেই।
কক্সবাজারের এই পরস্থিতিতে যে কাজটি অবশ্যই করণীয় সেটা হল সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব মেইনটেন করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ঠিক এই কথাটাই বলছে। দেশের সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মাস্ক পরা, গাউন পরা, গ্লাভস পরা নিয়ে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হল শারীরিক দূরত্ব (পারস্পরিক এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব ) এবং হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা, যাতে হাতের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস নাকে, মুখে বা চোখে প্রবেশ করতে না পারে। সাধারণ মানুষের সামাজিক দূরত্ব আর হাত ধোয়ার বিকল্প নেই।
COVID-19 এ আক্রান্ত রোগী এবং রোগীর সেবাদানকারীকে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। সেবাদানকারীকে মাস্ক সহ অন্যান্য পি পি ই পরিধান করতে হবে। সাধারণ জনগণ যে হারে সব ধরণের পি পি ই (গাউন, মাস্ক, গ্লাভস ) পরিধান করে রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করছে সেটা হল পি পি ই এর অযৌক্তিক ব্যবহার বা মিস ইউজ। এতে করে পি পি ই এর সংকট তৈরি হচ্ছে যা একসময় প্রকট আকার ধারণ করবে এবং এতে স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরাই প্রয়োজনের সময় পি পি ই পাবে না, যার ভুক্তভোগী হবো আমি আপনি আমরাই।
শ্বাস-প্রশ্বাস ও হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে সবাইকে। হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় অবশ্যই টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি কোন একটি মুখবন্ধ ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। টিস্যু না থাকলে হাঁচি বা কাশি খোলা জায়গায় না দিয়ে হাতের কনুইয়ে দিতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই হাঁচি বা কাশি দেয়ার পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে অথবা হ্যান্ড স্যানিতাইজার ব্যবহার করতে হবে।
জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের এখনকার পরিস্থিতে একযোগে একই উদ্দেশ্যে কাজ করা উচিত। শহরের ব্যস্ততম বাজারগুলোতে এখনও যে পরিমাণ মানুষের সমাগম হয় ট্যাট্যাই বুঝা যায় মানুষ এখনও সচেতন নয়। আমাদের আশেপাশের দেশের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই তাদের বেশ কিছু জায়গায় কত সুন্দর ভাবে বাজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেকের মাঝখানে কমপক্ষে এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব মেইনটেন করা হয়। মাছ বাজার, কাঁচা বাজার সব জায়গায় বিক্রেতার মাঝখানে এমনভাবে দূরত্ব রাখতে হবে যাতে ক্রেতারা অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে। আর একাজে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও কঠোর হতে হবে প্রয়োজনে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছুটা শিথিলতার কারণে এখন রাস্তাঘাটে জন সমাগম প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে যা কদিন আগেও এতোটা ছিল না। এক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা যে মাত্রায় বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষ মোটেই ওয়াকিবহাল নয়। লক ডাউন পূর্নরূপে কার্যকর করতে হবে।
দেশে এখন যে সংখ্যায় করোনা ভাইরাসের টেস্ট করা হচ্ছে তা মোটেই যথাযথ নয়। এই সংখ্যা অচিরেই বাড়াতে হবে যাতে করোনায় আক্রান্তের আসল সংখ্যা সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট হয়।
অনেকেই আছেন COVID-19 এর লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না বা টেস্ট করাচ্ছেন না। তাঁদের মধ্যে একটা সামাজিক ভয় কাজ করে যা নিতান্তই অমূলক। এতে করে তিনি শুধু তাঁর নিজের বা নিজ পরিবারের ক্ষতিই করছেন না, ক্ষতি করছেন পুরো সমাজের। তাই জ্বর, সর্দি , কাশি, গলা ব্যথাসহ অন্যান্য লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেলেই হাসপাতালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও করোনা স্বেচ্ছাসেবক
Posted ৯:৪২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta