কক্সবাংলা ডটকম :: চীনের হুমকি অগ্রাহ্য করে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন সাই। সফর শুরুর আগে চীনকে ইঙ্গিত করে সাই বলেছেন, ‘বাইরের চাপে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ রাখা বন্ধ করবে না তারা।’ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের সঙ্গে সম্ভাব্য সাক্ষাৎকার নিয়ে চীনের হুঁশিয়ারিকে উড়িয়ে দেন সাই।
রয়টার্স জানায়, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই মূলত গুয়েতেমালা ও বেলিজে যাবেন। তবে যাত্রাপথে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এবং ফিরতি পথে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিরতি নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতির সময়টুকুই সাইয়ের নির্ধারিত ১০ দিনের সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ম্যাককার্থির সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই সাক্ষাৎ করলে প্রতিশোধ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। তবে চীনের চোখ রাঙানিকে খুব একটা পাত্তা না দেয়ার বিষয়টি সাইয়ের কথায় পরিষ্কার হয়ে গেছে।
চীনের নাম উচ্চারণ না করেই তাইওয়ানের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাই বলেন, ‘বাইরের কোনো চাপ আমাদের বিশ্বের কাছে যাওয়ার সংকল্পকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমরা স্থির ও আত্মবিশ্বাসী। আমরা কারও কথা মেনেও নেব না আবার কাউকে উসকানিও দেব না। তাইওয়ান দৃঢ়ভাবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে এবং বিশ্বের কাছে যাবে। যদিও এই পথ কঠিন, তবে তাইওয়ান একলা নয়।
রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের পথে সাইয়ের যাত্রার কিছু সময় পরই বেইজিংয়ে চীনের তাইওয়ান-বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ঝু ফেংলিয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতির পথে সাই বিমানবন্দরে বা হোটেলে পরের বিমানের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন ব্যাপারটা এমন নয়। আদতে তিনি এই সময়ে মার্কিন কর্মকর্তা ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
ঝু ফেংলিয়ান আরও বলেন, যদি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ম্যাককার্থির সঙ্গে সাই যোগাযোগ করেন, তাহলে সেটা হবে একক চীন নীতির গুরুতর লংঘন করার আরেকটা উসকানি, যা চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ক্ষতি করবে এবং তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। চীনের তাইওয়ান-বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এগুলোর দৃঢ় বিরোধিতা করছি এবং অবশ্যই পাল্টা পদক্ষেপ নেব।’
এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়াকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করছে ওয়াশিংটন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে বিরতি নেয়ার ঘটনা আগেও দেখা গেছে। এখন সাইয়ের এই ‘ট্রানজিটকে’ কাজে লাগিয়ে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়া চীনের উচিত হবে না বলে তারা মনে করেন।
ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, চলতি সপ্তাহে ও এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে সাইয়ের ‘ট্রানজিটকে’ কেন্দ্র করে চীনের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো মানে নেই। আগের ট্রানজিটগুলোতেও সাই মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য, প্রবাসী তাইওয়ানি ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকসহ নানান কিছু করেছেন, বলেছেন ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই এমন একসময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রানজিট’ নিচ্ছেন, যখন ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ১৯৭৯ সালে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। চীনের কাছে তাইওয়ান অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যু। তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে চীন। স্বশাসিত দ্বীপটিকে বাগে আনতে প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।
এদিকে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘একক চীন’ নীতি সমর্থন দেয়। কূটনৈতিক স্বীকৃতি না দিলেও স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
Posted ২:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta