কক্সবাংলা ডটকম(৭ এপ্রিল) :: বাণিজ্যযুদ্ধে ‘যে কোনো মূল্য’ চুকাতে প্রস্তুত চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংয়ের ওপর বর্ধিত ১০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়ার পর এ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। খবর এএফপি।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যদি যুক্তরাষ্ট্র চীন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে এবং একপাক্ষিকতা ও বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ চালিয়ে যায়, তবে চীন যে কোনো মূল্যে এ যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বাণিজ্যযুদ্ধ চাই না, কিন্তু যুদ্ধের ব্যাপারে ভীত নই।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র চীনের ৫ হাজার কোটি ডলারের রফতানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করে একটি তালিকা প্রকাশ করে। বেইজিং মেধাস্বত্ব সম্পদ এবং প্রযুক্তি চুরি করছে এ অভিযোগে শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানায় দেশটি।
বুধবার এর পাল্টা জবাব হিসেবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান রফতানি পণ্য সয়াবিন, গাড়ি এবং ছোট আকারের উড়োজাহাজের মতো ৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা জানায়।
এ পাল্টাপাল্টি চক্রে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বেইজিংয়ের ওপর পরিকল্পিত শুল্কের পরিমাণ দ্বিগুণ করবেন।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, নিজের ভুল আচরণ শুধরানোর বদলে চীন আমাদের কৃষক এবং ম্যানুফ্যাকচারারদের ক্ষতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাম্প আরো বলেন, ‘চীনের অন্যায্য পাল্টা জবাবের আলোকে’ তিনি বাণিজ্য কর্মকর্তাদের আরো ১০ হাজার ডলারের পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা যায় কিনা তা বিবেচনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন । ট্রাম্প বলেন, তিনি এখনো সমঝোতার জন্য উন্মুক্ত রয়েছেন, তবে কেবল যদি তারা (চীন) মুক্ত, ন্যায্য এবং পারস্পরিক বাণিজ্য করতে সমর্থ হয়, তবেই তা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার চীন ট্রাম্পের পরিকল্পিত প্রথম রাউন্ডের শুল্কের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, চীনের উৎপাদিত মেশিনারি, ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শুল্ক এবং পদক্ষেপের কারণে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দেশটির প্রতিনিধিকে ‘পরামর্শ’ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ডব্লিউটিওর বিবাদ মীমাংসায় পূর্ণমাত্রায় আইনি অভিযোগের প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘পরামর্শ করার জন্য অনুরোধ’ জানানো।
এছাড়াও বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর কিছু রফতানিপণ্য, যেমন- সয়াবিন, উড়োজাহাজ এবং গাড়ির ওপর কঠোর আমদানি শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।
দুদেশের প্রস্তাবিত কোনো শুল্কই এখনো কার্যকর হয়নি, তবে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির এ বিপজ্জনক শুম্ভ-নিশুম্ভের খেলায় পিষ্ট হতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনায় বিশ্বজুড়ে বাজারগুলো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগকারীরা বুঝে উঠতে পারছেন না, এ হুমকিগুলো সত্যি নাকি ফাঁকা আওয়াজ। ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৪০০ পয়েন্ট হারিয়েছে।
ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপরেও চড়া শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। চীনও এ হুমকির অংশ।
এর জবাবে চীন তাজা ফল, শূকরের মাংস এবং রিসাইকেল করা অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে। গত বছর এসব খাতে যুক্তরাষ্ট্র ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল।
গত শতাব্দীর বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে ছিল, তবে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার চীন ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
বেইজিংয়ের কাছে অর্থনৈতিক খাতে পরমাণু অস্ত্রের মতো হাতিয়ার আছে। কারণ দেশটির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এক ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বন্ড রয়েছে। বেইজিং যদি এর সামান্য অংশও ছেড়ে দেয় তবে বন্ড মার্কেট টালমাটাল হয়ে পড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ গ্রহণের হার অনেক বেড়ে যাবে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময়কাল থেকেই ট্রাম্প বলে আসছিলেন, তিনি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন। তবে বৃহস্পতিবারের ঘোষণায় তার কাছের লোকজন এমনকি নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির ঘনিষ্ঠরাও ভীত হয়েছেন।
রিপাবলিকান সিনেটর বেন সাসে বলেন, আশা করি প্রেসিডেন্ট কেবল ধোঁয়া ওড়াচ্ছেন, যদি তিনি এর অর্ধেক সিরিয়াসও হন, তবে ব্যাপারটি পাগলামি। চীন অনেক ব্যাপারেই দোষী, তবে প্রেসিডেন্টের এ মুহূর্তে জেতার জন্য বাস্তবিক কোনো পরিকল্পনা নেই। চীনের বাজে ব্যবহারের জন্য এমন কোনো পরিকল্পনা করা উচিত, যা আমাদের বদলে ওদের শাস্তি দেবে। তবে এখন যেভাবে হচ্ছে, তা সবচেয়ে বোধবুদ্ধিহীন আচরণ।
Posted ৯:১৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta