কক্সবাংলা ডটকম(১০ অক্টোবর) :: যে নয়টি দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হতো, এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশ পোশাক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি দেশগুলো হলো—যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম ও কানাডা। এই সাতটি দেশে একবছরে ৩৬ কোটি ডলারেরও বেশি রফতানি কমেছে।
এছাড়া নেদারল্যান্ডস ও ইতালিতে পোশাক রফতানি আগের মতোই রয়েছে। দেশের মোট পোশাক রফতানির ৯০ শতাংশের বেশি আয় আসে এই নয়টি দেশ থেকে। রবিবার (৮ অক্টোবর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
আর ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছিল ১৪৭কোটি ডলার। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—এই তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার। এই হিসাবে একবছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনীতিতে এতদিন তৈরি পোশাক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এখন কেবল তৈরি পোশাক রফতানির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। বিভিন্ন দেশে বিকল্প পণ্য রফতানিতে মনযোগ দিতে হবে। আবার পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর নির্ভর না করে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে। তা না হলে পোশাক রফতানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
জার্মানিতে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পোশাক রফতানি ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ কমেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে দেশটিতে ১১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১২৪ কোটি ডলারের পোশাক। এই হিসাবে একবছরের ব্যবধানে দেশটিতে ৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
যুক্তরাজ্যে ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে পোশাক রফতানি কমেছে ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—এই তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৮৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৯২ কোটি ডলার। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
ফ্রান্সে ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে কমেছে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৪৯ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৫৩ কোটি ডলার। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ফ্রান্সে ৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
স্পেনে ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৪৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৫১ কোটি ডলার। এই হিসাবে একবছরের ব্যবধানে স্পেনে ৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
বেলজিয়ামে ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে পোশাক রফতানি কমেছে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১৯ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ২৩ কোটি ডলার। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
কানাডায় ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে পোশাক রফতানি কমেছে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ২৭ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ২৮ কোটি ডলার। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে টিকে থাকার জন্য পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের নানামুখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমরা নতুন নতুন বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে নেদারল্যান্ডসে ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ২২ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৬ কোটি ডলার। এই হিসাবে রফতানি বেড়েছে ৬ কোটি ডলার।
এদিকে ইতালিতে ২০১৬ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় ২০১৭ সালের একই প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ । চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত—তিন মাসে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩৬ কোটি ডলার। এই হিসাবে রফতানি বেড়েছে ২ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে মোট রফতানির ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ আয় হয় ওভেন গার্মেন্টস পণ্য থেকে। এর বাইরে ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ আয় হয় নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করে। এছাড়া, অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ বছর ধরে তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চালু আছে ৪ হাজার ৩২৮টি তৈরি পোশাকের কারখানা।
Posted ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta