কক্সবাংলা ডটকম :: দেশের বাজারে গত মাসেই সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় লিটারে ৮ টাকা।
এখন আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। তবে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে লিটারে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা করা হয়। এখন অন্তত ১৯০ টাকা লিটার করার দাবি মিল মালিকদের।
তবে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় গত ১৫ জানুয়ারি তাগাদাপত্র দেয়া হয়।
আসন্ন রমজান উপলক্ষে বাজার সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে মূল্য সমন্বয়ের অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে।
অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের বর্তমান মজুদ ও আমদানি মূল্য বিশ্লেষণপূর্বক অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য সমন্বয় করার জন্য আবেদন করেছিলাম।
কিন্তু অদ্যাবধি মূল্য সমন্বয়ের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি নেই।’
দাম সমন্বয়ে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর দেয়া চিঠির কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংগঠনের চিঠি পেয়েছি। মতামত দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’
২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল সয়াবিনের দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল মিল মালিকরা। তারও আগে ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম ১৬৩ টাকা নির্ধারণ হলে কার্যকর হয় ১ মার্চ থেকে।
গত বছরের মে মাস থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘদিন সয়াবিনসহ বিভিন্ন ভোজ্যতেলের দাম আর পুনর্নির্ধারণ হয়নি।
তবে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিকারকরা দাম বাড়ানোর তাগাদা দিলেও পরিবর্তিত সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় অস্থিরতা কমাতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
বরং আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ও ভোক্তা ভ্যাট কমিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে। তাতেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মিলারদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়।
তবে মিল মালিকরা বলছেন, ৯ ডিসেম্বর সয়াবিনসহ বিভিন্ন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালেও তখন দাবি ছিল আরো বেশি। দীর্ঘদিন দাম সমন্বয় না করায় একসঙ্গে বড় পরিবর্তন করতে চায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
যার কারণে ৯ ডিসেম্বরের পর জানুয়ারির ১০ তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলারদের বৈঠকের কথা ছিল। নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়।
চিঠিতে সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
এতে মিলগুলো উৎপাদন ধরে রাখলেও সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোম্পানির অন্যান্য উৎপাদিত পণ্য ক্রয়ের শর্তে সয়াবিন সরবরাহ দিচ্ছেন।
মূলত লোকসান পুষিয়ে নিতে এ পন্থা অবলম্বন করছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
মিল মালিক-আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার শুল্ক, ভ্যাট কমালেও বাড়তি মূল্যে আমদানির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চমূল্যে ডলার ক্রয় করতে হচ্ছে।
সরকারিভাবে ডলারের দাম ১২০ টাকা হলেও ১২৭-১২৮ টাকা করে ঋণপত্রের দায় মেটাতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। যার কারণে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করলে বড় লোকসান হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
তাছাড়া প্রতি মাসেই ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণের নিয়ম থাকলেও সরকার দেশীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দাম বাড়ানোর পথে হাঁটেনি। ফলে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র একবার দাম পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় দামের পার্থক্য অনেক হয়ে গেছে।
একসঙ্গে বড় পরিবর্তন হলে সরকার ইমেজ সংকটে পড়বে। যার কারণে এখনই দাম বাড়ানোর মাধ্যমে একসঙ্গে বড় পরিবর্তনের হাত থেকে ভোজ্যতেলের বাজারকে রক্ষা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
দেশে অন্যতম ভোজ্যতেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ভোজ্যতেলের দাম দীর্ঘ সময় পুনর্নির্ধারণ হয়নি।
ডিসেম্বরে দাম কিছুটা বাড়ানো হলেও সেটি মিল মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী ছিল না। ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকের নির্ধারিত ডলার মূল্য থাকলেও আদতে অনেক বেশি দামে ডলার ক্রয় করে দায় মেটাতে হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় দাম পুনর্নির্ধারণ না হওয়ায় বড় একটি পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এখন ধারাবাহিকভাবে সমন্বয় না করলে রোজায় বাড়তি চাহিদার জোগান নিশ্চিত করতে আমদানিকারকরা বড় সংকটের মধ্যে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
ট্যারিফ কমিশন সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেলের দাম নিম্নমুখী। গত অক্টোবরের দাম নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেড়ে গিয়েছিল। ডিসেম্বরের শেষদিকে দাম আবারো কমে গেছে।
গত সপ্তাহে আরো কমেছে। অর্থাৎ দাম এখন নিম্নমুখী। ওয়ার্ল্ড আউটলুকে দেখা গেছে বৈশ্বিকভাবে তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম নিম্নমুখী। আশা করা যায় যে রমজান মাসেও দাম স্থিতিশীল থাকবে। সব মিলিয়ে রোজার মধ্যে তেলের বাজারে কোনো সমস্যা হবে না। তেলের বাজারে স্বস্তি আছে।
ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত কী—এমন প্রশ্নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
দাম নির্ধারণের কোনো সিদ্ধান্ত হলে সেটি সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।’ এর বেশি তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Posted ১:২৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta