কক্সবাংলা ডটকম :: ‘আড়ালের এই সময়টাতে শাকিব খানের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা? বুবলী বললেন, শাকিব খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে…’ গত ৬ জানুয়ারি শোবিজ বিভাগে ‘সময় হলেই খুলবে রহস্যের জট’ শিরোনামে বুবলীর দেওয়া সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদনে প্রশ্নের জবাবে এ অভিনেত্রী উপরের কথাগুলো বলেন। কিন্তু দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে শাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কের গুঞ্জনের বিষয়টি তিনি পরিষ্কার করেননি। বলতে গেলে ধোঁয়াশাই রেখে দেন বহুল আলোচিত এ ব্যাপারটি। শাকিব-বুবলীকে নিয়ে দর্শক ও পাঠকের যে কৌতূহল তার কোনো সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি সে জবানীতে।
এ যেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতার’ শেষ পঙ্ক্তি ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’-এর মতোই অধরা। তার এ জবাবের রেশ ধরেই অভিনেতা শাকিব খানের কাছে জানতে চাইলাম, ‘আপনি কি আসলেই বুবলীর খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, আর কী খবরইবা জানতে চেয়েছেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিবের ত্বরিত জবাব, ‘আরে ও তো আমার সহকর্মী, একজন সহকর্মীকে দীর্ঘদিন ধরে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না, সহকর্মী হিসেবে তার খবর নেওয়াটা তো দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাই খবর নিতেই তাকে ফোন দিয়েছিলাম’। পরের প্রশ্ন- ‘তা বুবলী কী বলেছিলেন?’ শাকিব বললেন, ‘না কোনো কথা হয়নি, ও কল রিসিভ করেনি, হয়তো ব্যস্ত ছিল’।
শাকিব-অপুর পর এবার শাকিব-বুবলী অধ্যায়ের সূত্রপাত। আর এ সূত্রপাতের আয়োজক তারাই। কারণ শাকিব-অপুর মধুর সংসার ভেঙে যাওয়ার উপাত্ত হিসেবে বুবলীর নামই ঘুরেফিরে বারবার ওঠে আসে। শাকিবের সঙ্গে বুবলীর প্রেমের গল্পটা শুরুতেই শুনিয়েছিলেন অপু বিশ্বাস। শাকিব-অপু গোপনে ২০০৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও অপুর কথায় শাকিবের নির্দেশেই তা দীর্ঘদিন তাকে গোপন রাখতে হয়েছিল।
২০১৬ সালের মার্চে হঠাৎ করেই অপু চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে। চলচ্চিত্র বা মিডিয়ার কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কেটে গেল ১৪ মাস। অপুর কোনো খবর নেই। অপু আড়াল হওয়ার অনেক আগেই কিন্তু শাকিব-অপুর প্রেম আর পরিণয়ের গুঞ্জন আকাশে-বাতাসে উড়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু দুজনই বরাবর তা অস্বীকার করে আসছিলেন। এমনকি অপু আড়ালে চলে যাওয়ার পর মিডিয়ার পক্ষ থেকে শাকিবের কাছে অপুর খবর বারবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রতিবারই শাকিব খান বলেছিলেন, ‘অপুর খবর আমি কীভাবে জানব’। নিজেদের প্রেম-বিয়ের খবর অস্বীকার করে দুজনই বলেছিলেন, ‘সবই গুজব। আমরা দুজন সহকর্মী ও ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই নয়’।
২০১৬ সালে অপু আড়াল হওয়ার পর একমাত্র যোগাযোগ রেখেছিলেন এ অভিনেত্রী। তখন বলেছিলেন, অনেক কষ্ট আর ক্ষোভের কথা। অপু তার কষ্টের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুবলীর দিকেই আঙুল তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘শাকিব আমাকে বিয়ে করার পর বিয়ের কথা গোপন রাখাসহ সে যা বলেছে আমি তা মেনে নিয়েছি। ২০১৬ সালের মার্চে যখন বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ ছবির শুটিং করি তখন আমি প্রেগন্যান্ট। এ অবস্থাতেও শুটিং করে গেছি। শেষ পর্যন্ত যখন বেবি বাম্প আর গোপন করা যাচ্ছিল না, তখনই আড়ালে চলে যাই। অপু বলেছিলেন, ‘আমার কষ্টটা ছিল বুবলীকে নিয়ে। আমি লক্ষ্য করলাম শাকিবের সঙ্গে বুবলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। নানাজন আমাকে বিষয়টি জানিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে শাকিবের কাছে জানতে চাইলে সে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। সে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করার কথা বলত।
এতে আমি রাজি না হলে সে আমাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। যখন কলকাতার একটি হাসপাতালে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাচ্চা ডেলিভারির জন্য ভর্তি হই তখন ২৭ সেপ্টেম্বর বাচ্চা হওয়ার সময় বা তার আগে ও পরে একবারের জন্যও হাসপাতালে আমাকে বা বাচ্চাকে দেখতে আসেনি শাকিব। সে তখন বুবলীকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। বাচ্চাকে নিয়ে যখন দেশে ফিরি তখন সে আমার অনুরোধে আমার বাসায় বাচ্চা দেখতে আসত। আমি তাকে বিষয়টি সবাইকে জানানোর কথা বললে সে বলত, ‘এখন বিষয়টি সবাই জেনে গেলে আমার ফিল্ম ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে। সময়মতো জানানো যাবে।’ আমি তার কথা মেনে নিয়ে তাকে জানাই, ‘এক শর্তে আমাদের বিয়ে ও বাচ্চার বিষয়টি গোপন রাখতে পারি। আর তা হলো তুমি আর বুবলীর সঙ্গে ছবি করতে পারবে না।’ অপু বলেছিলেন, শাকিব আমার শর্ত মেনে নিয়েছিল, সে আমার কথা রাখায় আমিও খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু না, এই খুশি বেশি দিন টেকেনি।
২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সকাল সকালই আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। একটি পত্রিকায় দেখলাম শাকিব-বুবলী জুটি বেঁধে ‘রংবাজ’ শিরোনামের একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছে। শাকিব আমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙায় আমার রাগ-ক্ষোভ চরমে পৌঁছাল। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম তার কথা রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমি টিভি লাইভে এসে আমাদের প্রেম-বিয়ে আর বাচ্চার কথা দেশের মানুষকে জানালাম। অপুর কথায় এর পরের ইতিহাস তো সবারই জানা।
শাকিব-বুবলীর দর্শকরা এখন নাকি ২০১৬ সালে অপুর আড়াল হওয়ার সঙ্গে প্রায় ১১ মাস ধরে বুবলীর উধাও হওয়ার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। দর্শকদের প্রশ্ন- ‘তাহলে কী অপুর পথেই হাঁটছেন বুবলী’। মানে শাকিব-বুবলীর প্রেম, পরিণয় আর সন্তান জন্মের যে গুঞ্জন বর্তমান সময়ে কান ভারি করে রেখেছে তা-ই একদিন সত্যি হবে। অপুর মতো বুবলীকেও কি দেখা যাবে শাকিবের বাচ্চা কোলে নিয়ে জনতার দরবারে হাজির হতে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে দেওয়া ৬ জানুয়ারির সাক্ষাৎকারে বুবলী বলেছেন, ‘আমি দর্শকদের তাদের আগ্রহের জায়গা থেকে ধন্যবাদ ও সম্মান জানাব। তারাও আমার থেকে অনেক কিছু শুনতে চান, যেটা স্বাভাবিক। এমনকি এসব গুঞ্জন নিয়ে সাংবাদিকরা আমাকে আমার দিক থেকে বিষয়টি খোলাসা করতে বলেছেন। কিন্তু এ জায়গা থেকে বিষয়টা এত বেশি সেনসেটিভ যে, আমি হুট করে কিছু বলতে চাই না। আসলে সব কিছুর একটা প্রপার টাইম আছে। সময় হলে বিষয়গুলো জানাব, খুলে যাবে রহস্যের জট। আমরা যতই বলি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আমাদের মধ্যে রাখব, আসলে সেটা হয় না।’ বুবলীর এমন রহস্যঘেরা ও অসম্পূর্ণ বক্তব্য শুনে পাঠক-দর্শকরা বলছেন, ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। তারা বলছেন, বুবলীর এ বক্তব্যকে মনে হচ্ছে ট্রেলার, আমরা এখন পুরো ছবিটি দেখার অপেক্ষায় আছি।
বুবলীর বক্তব্য শাকিবের কাছে তুলে ধরে এর সঙ্গে তার যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করলে শাকিবের সাফ জবাব, ‘বুবলী কী বলছে বা বলছে না কিংবা কেন বলছে তা আমি কীভাবে জানব। ওকেই জিজ্ঞাসা করুন। ও আমার কো-আর্টিস্ট আর ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের নিয়ে এসব গুঞ্জনের কোনো মানে হয় না। শাকিব এও বলেন, স্টারডাম বলে একটা কথা আছে। সব দেশেই স্টারদের নিয়ে এমন গসিপ হরহামেশাই শোনা যায়। এসব গায়ে মাখতে গেলে কাজ করব কখন। আমি এ ব্যাপারে কোনো কথা আর বলতে চাই না। ‘বুবলী’র সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অপুর সঙ্গে তার দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি হয়েছে, অপুর এমন অভিযোগের জবাবে শাকিব খান বরাবরই বলে আসছেন, এটি একবারে ভিত্তিহীন অভিযোগ, আসলে অপুকে বিয়ে করার অল্পদিনের মধ্যেই টের পেলাম সে অন্য এক নায়কের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। ২০১০ সালে তাদের দুজনকে হাতেনাতে ধরেও ফেলেছিলাম। পত্রপত্রিকায় এ খবর তখন ফলাও করে প্রকাশও হয়েছে। পরে সে ক্ষমা চাওয়ায় তাকে নিয়ে আবার সংসার শুরু করি। কিন্তু প্রবাদ আছে ‘…লেজ কখনো সোজা হয় না’, অপুর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। তাদের পরকীয়া যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায় তখনই তার সঙ্গে বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে বাধ্য হই’। যা গেছে তা অতীত, এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
Posted ১০:১১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta