কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জানুয়ারি) :: অপারেশন প্লান অনুযায়ী সেনা প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ ছোট একটা টীম নিয়ে বঙ্গভবনে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। বঙ্গভাবনের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে পিজি আর (প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট) এবং এস.এস.এফ ( স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স)।
সেনাবাহিনীর আওতায় দুটি সংস্থার প্রধানদের অপারেশন প্লান সম্পর্কে ব্রিফ করা হবে। পরিকল্পনা হলো, বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট এবং তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড: ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বোঝানো হবে।
এজন্য প্রথমে তার কাছে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান পদ থেকে একটি পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেয়া। ড: ইয়াজ উদ্দিনকে দিয়ে নির্বাচন বাতিল এবং নতুন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন সম্পর্কে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন রেকর্ড করা। অপারেশন প্লানের প্রথম পরিকল্পনা ছিলো রক্তপাতহীন, কোন রকম সহিংসতা ছাড়া ঘটনা ঘটানো। কিন্তু বঙ্গভবনের ভেতর থেকে যদি কেবল বাধা আসে, রাষ্ট্রপতি নিজে যদি এধনের প্রস্তাবে রাজী না হয় সেক্ষেত্রে বিকল্প পথও খোলা রাখা হয়েছিল। সেটা হতো ভয়ংকর।
জেনারেল মঈনের নেতৃত্বে গাড়ী বহর বিনা বাধায় বঙ্গভবনের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে গেল। জেনারেল মঈনকে অভ্যর্থনা জানালেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব। রাষ্ট্রপতির কক্ষের কাছে যেতে একজন ব্যক্তিগত স্টাফ জানালেন, রাষ্ট্রপতি ঘুমাচ্ছেন।
মঈন রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত প্রয়োজন বলে, মূল বসার কক্ষে অন্য সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে অপেক্ষা করলেন। মিনিট দশেকের মধ্যে লুঙ্গি পরে রাষ্ট্রপতি এলেন। রাষ্ট্রপতি কক্ষে ঢোকা মাত্র, কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা অস্ত্র তাক করলেন।
অস্ত্র দেখেই হাত তুললেন ইয়াজ উদ্দিন। কেঁদে উঠলেন। তারপর বললেন ‘আমাকে মাইরেন না। আপনারা যা বলবেন তাই করবো।’ জেনারেল মঈন খুব আদর করে ইয়াজ উদ্দিনকে একটা সোফায় বসালেন। সংক্ষেপে তাকে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখা করলেন।
এরপর বললেন ‘আপনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান থেকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন একজনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।’
ড: ইয়াজ উদ্দিন হাত জোড় করে বললেন ‘আমি কি প্রেসিডেন্ট থাকবো?’ মঈন ইতিবাচক মাথা নাড়লেন। ইয়াজ উদ্দিন কম্পিত হাতে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করলেন।
মোখলেছকে উত্তম-মধ্যম
বঙ্গভবনে সবকিছুই ঠিক ঠাক হতো চলছিলো। এমনকি জেনারেল মঈনের নেতৃত্বে টীম যে নূন্যতম বাধা কিংবা আপত্তি প্রত্যাশা করেছিলেন, সেটাও হয়নি। ড: ইয়াজউদ্দিন যখন পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করলেন, তখনই তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ড: ইয়াজ উদ্দিনের অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। এখন নির্বাচন বাতিল এবং নতুন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন পর্ব। এজন্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিননের একটি ভাষন রেকর্ড করতে হবে। ভাষন লিখেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ইয়াজ উদ্দিনকে বলা হলো, আপনি তৈরী হয়ে আসুন। আপনার একটা ভাষন রেকর্ড করা হবে। বঙ্গভবনে বিটিভি একটা দল সার্বক্ষনিক থাকে। বক্তৃতা রেকর্ড করার সব ব্যবস্থাই রয়েছে। কম্পিত পায়ে ইয়াজ উদ্দিন চলে গেলেন তৈরী হতে। কিন্তু তখনও অনেক নাটক বাকী।
ইয়াজ উদ্দিন চলে যাবার কিছুক্ষনের মধ্যেই হস্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন মোখলেছুর রহমান চৌধুরী। হালকা পাতলা গড়ন, কোকড়া চুল। একসময় দিনকালে চাকরি করতেন। সেখান থেকে ইয়াজ উদ্দিনের প্রেস সেক্রেটারী হন। ইয়াজ উদ্দিন স্ব ঘোষিত ভাবে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবার পর, ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন মোখলেছ। মোখলেছ আসলে ছিলেন হাওয়া ভবন আর ইয়াজ উদ্দিনের যোগসূত্র।
হাওয়া ভবন থেকে যে নির্দেশ দেয়া হতো, সেটাই ইয়াজ উদ্দিনকে জানাতেন মোখলেছ। ফলে মোখালেছ হয়ে উঠেছিলেন ইয়াজ উদ্দিনের ডান হাত। মোখলেছের কথা ছাড়া ইয়াজউদ্দিন আসলে কিছু করতেন না। এমনকি উপদেষ্টা মন্ডলীর বৈঠকেও ইয়াজ উদ্দিন তাকে রাখতেন এবং কথা বলতে দিতেন।
এনিয়ে উপদেষ্টা মন্ডলীর দুই সদস্য ড: আকবর আলী খান এবং সুলতানা কামাল আপত্তি করেন। এই আপত্তির কারনে ড: ইয়াজ উদ্দিন উপদেষ্টা/মন্ত্রীর মর্যাদা দেন মোখলেছকে।
মোখলেছ এসেই বললেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কি ভাষন দেবেন তা আমাকে দেখতে হবে। জেনারেল মঈন প্রথমে চিনতে পারলো না, মোখলেছকে। জিজ্ঞেস করলেন, হু আর ইউ। মোখলেছ তার পরিচয় দিয়ে ভাষনের কপি চাইলেন। বিগ্রেডিয়ার আমিন তাকে ডেকে নিয়ে গেলেন পাশের কক্ষে। সংগে আরও দুজন সেনাকর্মকর্তা।
মোখলেছ বললেন, আপনারা যা ইচ্ছা তাই রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে বলাতে পারেন না। এক পর্যায়ে মোখলেছ, ভাষনের কপি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। ব্যস, তার উপর চড়াও হলো সেনাকর্মকর্তারা দুচারটা চড়, থাপ্পড়ে কেদে ফেললেন মোখলেছ। বিগ্রেডিয়ার আমিন এবার ধমক দিয়ে বললেন ‘কিপ কোয়াইট।’ কিছুক্ষন পর রাষ্ট্রপতির ভাষন ধারন করা হলো। শান্তিপূর্ণ ভাবে সব শেষ করে, মঈন তার দল নিয়ে বেরিয়ে গেলেন বঙ্গভবন থেকে।
Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta