কক্সবাংলা ডটকম(২৪ নভেম্বর) :: আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও দল মনোনীত প্রার্থীদের গোপনে ‘চূড়ান্ত’ গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মহাজোটের অন্যান্য শরিকদের জন্য আসন হাতে রেখে বাকি প্রার্থীদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে দলীয় হাইকমান্ড থেকে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকেও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাদের চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাদের আগেই ঢাকা ছেড়ে নিজ এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বলা হয়েছে। দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকবেন তারা।
এরই মধ্যে নিজ নিজ জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করে রেখেছেন কেউ কেউ। হাইকমান্ড থেকে কৌশলে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও বাগে আনার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে মনোনীতদের।
বিষয়টি আঁচ করতে পারায় এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা নিয়মিত ভিড় করছেন গণভবনে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীও কৌশলী হয়ে তাদের কথা শুনছেন। কারো কারো জীবন বৃত্তান্ত নিচ্ছেন, বিভিন্ন আশ^াসও দেয়া হচ্ছে তাদের। লক্ষ্য সবাইকে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামানো।
এরই অংশ হিসেবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণভবনে ভিড় করলে শেখ হাসিনা তাদের কথা শোনেন। এ সময় অনেকেই দলের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানান দলীয় প্রধানের কাছে। তুলে ধরেন প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রীও তাদের দাবি বিবেচনায় নেয়ার আশ^াস দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে ধরে নিয়ে শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ক্ষমতাসীনরা। সেই হিসেবে দলীয় সংসদ সদস্যসহ নেতাকর্মীদের তৈরি থাকতে বলা হয়। বিশেষ করে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন থেকেই বেশ জোরেশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে আওয়ামী লীগ।
ওই অধিবেশনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কীভাবে আবারো নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে দিক-নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরপরই নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা সারা দেশে সফর করেন।
সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে দলের বিভিন্ন টিমও সারা দেশ সফর করে। বিগত দুই বছরে ২ বার ভারত সফর ছাড়া বিদেশের কোনো সফরে যাননি ওবায়দুল কাদের। যদিও আওয়ামী লীগের অনেক নেতার দাবি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ অর্থাৎ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দলটি।
এবারের নির্বাচনেও বিজয়ের টার্গেট আওয়ামী লীগের। সেই হিসেবে তিনশ আসনেই শুরু থেকে উইনেবল প্রার্থীর খোঁজে ছিল দলটি। পাশাপাশি বর্তমান সংসদ সদস্যদের কর্মকাণ্ড নিবিড় মনিটরিং করেন স্বয়ং শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন জরিপ টিম গঠন করেন তিনি। তারা প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর সংসদ সদস্যসহ পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কার কী অবস্থান তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ১৪ দলসহ সম্ভাব্য জোট শরিকদের প্রার্থী সম্পর্কেও জরিপ করেন শেখ হাসিনা।
দেশীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উইংয়ের পাশাপাশি বিদেশি জরিপ প্রতিষ্ঠন ভাড়া করে প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য যাচাই-বাছাই করেন তিনি। ফলে কোন আসনে কাকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে, তা অনেক আগে থেকেই চূড়ান্ত করে রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তফসিল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই কিছু কিছু প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দিতে শুরু করলেও তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য আসনে ‘উইনেবল’ প্রার্থীদের গণভবনে ডেকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। জরিপের শুরুতে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের বিষয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট আসায় তাদের ডেকেও সতর্ক করে দেন শেখ হাসিনা।
তবে শেষের কয়েকটি জরিপে নিজ নিজ এলাকায় সাংসদদের অবস্থান বেশ উন্নতি হয়েছে বলে বিভিন্ন বৈঠকে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় এবার বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলী ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্টির হাইকমান্ড থেকে গোপনে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরপরই প্রার্থীরা ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চলে গেছেন। তারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন।
অনেকেই ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করে তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন নির্বাচনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণ করছেন তারা। পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছেও যাচ্ছেন তারা।
বলা যায়, হাইকমান্ডের সিগন্যাল পেয়ে তারা এখন পুরোপুরি নির্বাচনী মুডে চলাফেরা করছেন। তবে যেসব আসনে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ বর্তমানে আছে, অথচ বৃহৎ স্বার্থে জোটের অন্যান্য শরিকদের ছাড় দেয়ার সম্ভাবনা আছে- সেসব আসনের দলীয় প্রার্থীদের এখনো চূড়ান্ত সিগন্যাল দেয়া হয়নি। এসব আসন নিয়ে জোট শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দর কষাকষি চলছে। দফায় দফায় বৈঠকও হচ্ছে।
শনিবার ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আসন নিয়ে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আজ অথবা কাল শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা শেষে মহাজোটগতভাবে তিনশ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। যদিও শুরুতেই তিনশ আসনেই এককভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত ছিল আওয়ামী লীগের। পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলিয়ে যৌথভাবে প্রার্থী ঘোষণার কথা জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
এদিকে মনোনীত প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকেই সিগন্যাল দেয়া হয়নি। তবে যারা যারা পাওয়ার যোগ্য, বিশেষ করে এলাকায় জনপ্রিয়, ভোটারদের পছন্দের, বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী- তাদের তো আর সিগন্যাল দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
এমন প্রার্থীরা অবশ্যই মনোনয়ন পাবেন। আর এসব বিষয় যাদের মধ্যে ঘাটতি আছে, তারা তো চিন্তিত হবেনই। তবে সব বিষয় আজ অথবা কালকের মধ্যেই প্রকাশ হবে। মহাজোট শরিকদের ৬০টির বেশি আসন দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আজ রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ চিঠি তুলে দেয়া হচ্ছে।
দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন:
গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ শেখ হাসিনা
নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের
কুমিল্লা-১১ মুজিবুল হক
চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি
পিরোজপুর-১ শ ম রেজাউল করিম
মাগুরা-১ সাইফুজ্জামান শিখর
ঢাকা-১০ শেখ ফজলে নূর তাপস
ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খাঁন
ঢাকা-১৩ সাদেক খান
ঢাকা-১৪ আসলামুল হক
ফেনী-২ নিজামউদ্দিন হাজারী
দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি
ময়মিনসিংহ-১০ ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল
খুলনা-২ শেখ জুয়েল
নড়াইল-২ মাশরাফি বিন মুর্তজা
চট্টগ্রাম-৯ মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
টাঙ্গাইল-১ ড. আব্দুর রাজ্জাক
রাজশাহী-৪ এনামুল হক
ভোলা-৩ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন
শরীয়তপুর -২ এনামুল হক শামীম
কুষ্টিয়া-৪ আব্দুর রউফ
কুষ্টিয়া-৩ মাহবুব উল আলম হানিফ
নেত্রকোনা-৩ অসিম কুমার উকিল
গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল
গাজীপুর-৩ ইকবাল হোসেন সবুজ
ভোলা-২ আলী আজম
ঝিনাইদহ-১ আব্দুল হাই
ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ
ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার
ফেনী-২ নিজামুদ্দিন হাজারী
খুলনা-২ শেখ জুয়েল
সিরাজগঞ্জ-১ মো. নাসিম
মাদারীপুর-২ শাজাহান খান
নারায়ণগঞ্জ-১ কাজী গোলাম দস্তগীর
বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল
গত ৯ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মোট চার হাজার ২৩টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। এতে মোট আয় হয়েছে ১২ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
Posted ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta